সবে মাত্র ১৪ তে পা দিয়েছে আকাশ। অষ্টম শ্রেণি পাস করে এক বছর ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎ করে বাবার মৃত্যুতে সংসারে হাল ধরতে হয়েছে তার। সেই কাক ডাকা ভোরে জুতা পালিশের মালামাল নিয়ে চলে আসে হোসেনপুরের পোস্ট অফিসের সামনে। রাস্তার পাশে পোস্ট অফিসের এক কোণায় বসে । ছোট্ট কাঠের পাটাতন বিছিয়ে পালিশের মালামাল রাখে। একটি কাঠের পিঁড়িতে বসে সে। আরেকটা কাঠের পিঁড়িতে তার কাস্টমারকে বসতে দেয়। সাহেব কিংবা হতদরিদ্র পুরুষ-মহিলা জুতা পালিশে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিয়ে আসে। কিংবা ছিড়ে যাওয়া জুতাগুলো সেলাই করতে নিয়ে আসে ওর কাছে। সে নিপুণ হাতে জুতাগুলো সুন্দর করে পালিশ করে দেয়। এতে খুশি হয়ে যা বকশিশ দেয় তা নিয়ে সে সন্তুষ্ট।
প্রত্যুষেই পত্রিকা হকার চলে আসে। ছাপাখানার বিভিন্ন পত্রিকা কিনে পড়ে আকাশ। কোনদিন ১২টাকায়, আবার কোনদিন ৭টাকায় পত্রিকা কিনে পড়ে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পত্রিকার খুঁটিনাটি সকল বিষয়ই পড়ে এই ক্ষুদে মুচি।
আকাশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম দ্বীপেশ্বর গ্রামে। তার পিতার নাম স্বর্গীয় কিশোরী দাস। তার বাবা কিছুদিন আগে দুরারোগ্য রোগে মারা যান। সংসারে তিন ভাই, দুই বোন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তার উপার্জনে পরিবার চালাতে হয়। যেদিন সে কাজ করে সেদিন উনুনে পাতিল বসে। তার বাড়িতে ছোট্ট একটি কুঠির ঘর। এখানেই দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে কোনোমতে কাটছে তাদের। বাবা হারানোর সংসার পরিচালনার ভার এখন তার কাঁধে।
আট বছর বয়সে বাবার সাথে কাজ শুরু আকাশের। পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছাপাখানার বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার শখ আকাশের। লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক দৈন্যতায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ। এ বছর নবম শ্রেণীতে ভোকেশনাল শাখায় ভর্তি হওয়ায় আগ্রহী সে। অনেক টাকা দেনা, তবুও মনের সাহস অনেক বেশি। তার বিনয়ী ও চটপটে আচরণ মুগ্ধ করে সকলকেই। পত্রিকা পড়ার নেশায় তাকে বিভোর করে রাখে। শুধু দোকানে বসেই নয় বাড়িতে থাকলেও অবসর সময়ে পুরনো পত্রিকাগুলো হাতে নিয়ে বারবার চোখ বুলায়।
ক্ষুদে মুচি আকাশ বলেন, সেই ছোটবেলা থেকেই পত্রিকা পড়ার নেশা। বাবার হাত ধরে দোকানে এসেই ছাপা পত্রিকা পড়তাম। এখন নিয়মিত পত্রিকা কিনে পড়ি। কোনদিন ১২ টাকার পত্রিকা কোনদিন ৭ টাকার পত্রিকা কিনে সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ি। পত্রিকা পড়ে দেশের কোথায় কী ঘটছে, বিশ্বে কোথায় কি হচ্ছে সব জানতে পারছি। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে বাবার মৃত্যুর পর আর পড়তে পারছি না। সংসারে আর্থিক দৈন্যতা। যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনমতে কষ্টে চলছে সংসার জীবন। মা প্রায়ই অসুস্থ থাকে, ওনার ঔষধ কিনতে ও খাদ্য কিনতে ব্যস্ত থাকি। এ বছর ইচ্ছা আছে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হবো।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এহসানুল হক জানান, মুচি সম্প্রদায়ের জন্য সমাজসেবা অফিসে বিভিন্ন ভাতা আছে। অফিসে যোগাযোগ করলে তার জন্য ভাতা ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান তিনি।