গতকাল ২৭ এপ্রিল, ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামে (ইউএসটিসি) থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক একটি সচেতনতামূলক সেমিনার এবং ফ্রি থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহিনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। তিনি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে এবং স্বাস্থ্যসেবায় থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত বলে বক্তারা মতামত ব্যক্ত করেন।
এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। ধীরে ধীরে সেই কর্মসূচি সামাজিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে। সচেতনতামূলক এই সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়োটেডের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম। বায়োটেডের উদ্যোগে, জেনেক্স হেলথের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেইজ কেয়ার ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা এবং ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইউএসটিসি বিজ্ঞান ক্লাবের সহযোগিতায় এই সচেতনতামূলক সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে মূল বক্তা বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে করণীয় তুলে ধরেন। বক্তব্যে বলা হয়, থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে এবং বাংলাদেশে এটি একটি নীরব মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি থ্যালাসেমিয়া বাহক রয়েছে। এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ এবং বিবাহযোগ্য নারী-পুরুষ। এদের অধিকাংশই জানেন না তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। এই অজ্ঞতার কারণে ভবিষ্যতে তাদের সন্তানের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এই মুহূর্তে সচেতন না হলে আগামী এক দশকে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে এবং তৈরি হতে পারে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় রকমের হুমকি। থ্যালাসেমিয়া মুক্ত, সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেতে হলে এখনই সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন অনুষ্ঠানের মূল বক্তা।
থ্যালাসেমিয়া রোগের সহজ কোনো চিকিৎসা নেই। যেসব চিকিৎসা রয়েছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অপরদিকে, বিয়ের পূর্বে সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া বাহক সনাক্ত করা সম্ভব। যদি বাহক-বাহক বিয়ের সংখ্যা কমানো যায়, তবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
সেই জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা এবং প্রতিটি বিবাহযোগ্য নারী-পুরুষের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্তকরণ। ড. সওগাত জাতীয় পর্যায়ে বৃহৎ পরিসরে সনাক্তকরণ কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে এই রোগটিকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগী হলে বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে স্বাস্থ্য খাতে নীতি নির্ধারণের পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করার আহ্বান জানান।
ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সেমিনারে এবং ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেন। বায়োটেডের উদ্যোগে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে এই কর্মসূচি পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়।