ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর সারাদেশের সব থানাসহ পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভেঙে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। পরে অন্তবর্তী সরকারের নির্দেশনার আলোকে দেশের থানাগুলোসহ পুলিশী কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করে।
এই অবস্থায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ছাতক থানা অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান। তিনি ছাতক থানায় যোগদানের পর থেকে অপরাধ দমন ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে একজন তীক্ষ্ণ, কৌশলী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আভির্ভুত হয়েছেন।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ও স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, পুরো এলাকায় স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে ছাতকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান।
তিনি যোগদানের পর থেকে গত ৩ মাসে ৫টি চুরির মামলায় ৩ জন, ২টি খুনের মামলায় ৩ জন, ২টি জুয়া মামলায় ১৪ জন, ৭টি চোরাচালান মামলায় ১৪ জন আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নৌ পুলিশের মামলা ও আটক। ইজারা ছাড়া অবৈধভাবে উত্তোলনকারীও রয়েছে আটকের খাতায়। এই সময়ের মধ্যে ১টি অপহরণ এবং ১টি ছিনতাই মামলা দায়ের করা হয়েছে আদালতে। এ সময় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বা উদ্ধার, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ পর্যন্ত জিআর ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩৫০টি এবং সিআর ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৫৬টি। এক সময় পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা ধারণা ছিল, কিন্তু পুলিশ যে জনগণের প্রকৃত বন্ধু তার প্রতিচ্ছবি ইতিমধ্যেই অনেকটা ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। থানায় যোগদানের অল্পদিনের মধ্যেই ছাতক উপজেলাবাসীর কাছে ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান সুনাম অর্জন করে প্রিয় হয়ে উঠেছেন।
ওসির নেতৃত্বে থানার সকল পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন টিম গঠন করে নিত্যদিন পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ অভিযান। এতে মাদক, চোরাচালান ও জুয়া প্রতিরোধে কাজ করে সফল হচ্ছে ছাতক থানা পুলিশ। দক্ষ, মানবিক, সৎ চরিত্রে দৃঢ়তা ও সততায় শতভাগ পেশাদারিত্বে থানার কার্যক্রম সাহসিকতার সাথে পরিচালনা করতে ভূমিকা রাখছেন তিনি।
জানা গেছে, এলাকার বিভিন্ন অপরাধ ও সমস্যা মোকাবেলা করে পুলিশি সেবার মান সাধারণ মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌছাঁতে সক্ষম হয়েছেন ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি বিট পুলিশিং এ নিয়মিত ছুটে চলেছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রতিটি এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে আলোকপাত করে যাচ্ছেন সচেতনতা।
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ছাতক থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনকে নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছেন। এছাড়াও যেকোনো অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তাৎক্ষণিক আইনী সহায়তা কার্যক্রম দ্রুত পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি তার কক্ষে প্রবেশে আলাদা অনুমতি নিতে হয় না সেবা প্রার্থীদের। জনগণ আর নিজের মধ্যে দূরত্ব না রেখে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন অতি সাধারণ একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে। এখানে দায়িত্ন নেয়ার তিন মাসের মাথায় ছাতকের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন তিনি।আগের তুলনায় এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সেজন্যে ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হয়েছেন ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খাঁন তাঁর হাতে শুভেচ্ছা স্মারক ও সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন। মাদকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান, মামলা নিষ্পত্তি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর, সামাজিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সুষ্ঠু সুন্দরভাবে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন ওসি গোলাম কিবরিয়া। তাঁর এই ভূমিকার কৃতিত্ব হিসাবে জেলার ওসিদের মধ্যে তাকে শ্রেষ্ঠ (সেবা) ওসির সম্মানে ভূষিত করা হয়। বর্তমানে ছাতকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অপরদিকে, কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই সাধারন ডায়েরি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ থানার সেবাগুলো সহজে পাচ্ছেন মানুষ।
থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে আসা সেবা প্রার্থী জাহাঙ্গীর বলেন, একসময় থানায় দালালদের দৌরাত্ম ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমান ওসি যোগদানের পর থেকে থানা রয়েছে দালালমুক্ত। কোনো ধরনের বাড়তি টাকা ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে সন্তুষ্ট তিনি।
আরেক সেবা প্রার্থী বলেন, একটা সময় ছিল যখন সবাই মনে করতেন, থানা মানেই হয়রানি আর ঘুষের কারবার। কিন্তু আমাদের সেই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। থানাকে এখন সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা মনে হচ্ছে। এটার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে বর্তমান ওসি সাহেবের। তবে কঠিন এবং কোমল দু’টো রূপই তার রয়েছে। অপরাধীদের কাছে তিনি আতঙ্ক এবং সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে একজন জনবান্ধন কর্মকর্তা খ্যাতি। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরিরতদের পরিবারের লোকজনের খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন তিনি।
ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কিবরিয়া হাসান বলেন, পুলিশ জনগনের বন্ধু। রাজনৈতিক দল বিবেচনায় না নিয়ে, সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের দূরত্ব ও ভয়ভীতি দূর করে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশী সেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। থানায় সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের সবসময় সুন্দরভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ সরাসরি শুনে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দ্রুত কিভাবে আইনি সহায়তা দেয়া যায় তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য ছাতকবাসীর সার্বিক সহযোগিতা আন্তরিক কাম্য।