নতুন বছরের শুরুতে নতুন বই পায়নি ময়মনসিংহে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। জেলা শিক্ষা অফিস বই না পাওয়া শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, কয়েক লাখ শিক্ষার্থী বইবিহীন অবস্থায় বছরের প্রথম দিন ক্লাশ শুরু করেছে।
সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ৯৯৮টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৮০ লাখ ৮১ হাজার ৩৮০টি বইয়ের চাহিদা এনসিটিবিতে (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৫ লাখ ২ হাজার ৮১৮টি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। যা চাহিদার মাত্র ৬.২২% পূরণ হয়েছে।
একইভাবে, ৪ হাজার ৭১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৪০ লাখ বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু চাহিদার তুলনায় মাত্র ৪০% বই পৌঁছেছে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন, দরপত্র বাতিল করা, নতুন দরপত্র জারি করা এবং ছাপাখানায় বিলম্বের কারণে বই সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক বই এখনও ছাপানো হয়নি, আর মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ার কারণে ফেব্রুয়ারির আগে শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা একেবারেই কম। এ অবস্থায়, ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও শিক্ষার্থী অভিবাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া জান্নাত জানান, নতুন বছরে নতুন বইয়ের গন্ধ পেলাম না, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তার মতে, আমাদের বইগুলোতে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কল্পকাহীনি ও মিথ্যা তথ্য ছাপানো ছিল। বর্তমান সরকার সেগুলো বাতিল করে নতুন করে প্রকাশ করছে, তাই আমি সরকারের এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই। তবে, দ্রুত বই পাব বলে আশা করি।
ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ত্রিশাল, ফুলপুর, তারাকান্দা, গৌরীপুর, ফুলবাড়িয়া ও হালুয়াঘাট উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এসব উপজেলায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি শিক্ষার্থীরা চাহিদার শতভাগ বই পেলেও প্রাক প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কেউ বই পায়নি।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) লুৎফুন নাহার বলেন, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে কি পরিমাণ বইয়ের চাহিদা দেয়া হয়েছে এবং কি পরিমাণ বই বিতরণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে এধরণের কোন তথ্য জানানো হয়নি।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চাহিদার তুলনায় বই কমই পাওয়া গেছে। আশা করছি আগামী ২০ তারিখের মধ্যে সমন্ত বই শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে দিতে পারব।