বঞ্চিত কাউখালী, বরকল, জুড়াছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলার জনসাধারণ। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জেলা পরিষদে বিতর্কিত সদস্যদের বাতিল ও জজ কোর্টে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত ৩ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ফের পুনঃগঠনের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিগত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিদায় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল এই নতুন বাংলাদেশ থেকে এখনো বৈষম্য দূর হয়নি। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি এবং ফ্যসিষ্টদের দোসর পার্বত্য উপদেষ্টা হাসিনা সরকারের আমলের সাবেক রাষ্ট্র দূত পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমার পদত্যাগসহ রাঙামাটি জেলা পরিষদে বিতর্কিত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্য এবং জজকোর্টে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিম রায় পাম্পুসহ ৩ ব্যক্তির নিয়োগ বাতিলের দাবিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ- রাঙামাটি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাঙামাটি ইসলামী আন্দোলন ও রাঙামাটি বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন এক যোগে এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, অনতিবিলম্বে জেলা পরিষদের বিতর্কিত সদস্যদের প্রত্যাহার, জজ কোর্টে বিতর্কি ৩ব্যক্তিকে অপসারণ এবং পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রীপকে এই পদ থেকে অপসারণ করা জোর দাবি জানাই। মান্যবর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। অন্যথায় পরিষদ সদস্য থেকে বঞ্চিত ৪ উপজেলাবাসী,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা ও স্থানীয় জনতা রাজনৈতিক দল সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,জুড়াছড়ি উপজেলাবাসীর পক্ষে রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা, কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তারা মিয়া, বরকল প্রেস ক্লাবের (সাবেক) সভাপতি পুলিন বিহারী চাকমা, শিক্ষানবীশ আইনজীবী এমদাদ হোসেন, রাজস্থলীর (সাবেক) ইউপি চেয়ারম্যান উথান মারমা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাকিব হাসান, ইসলামী আন্দোলন রাঙামাটি পৌর কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুর রউফসহ আরো অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তারা বিভিন্ন অভিযোগ এনে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন প্রতিনিধি রাখার রেওয়াজ থাকলেও ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর যে প্রজ্ঞাপন হয়েছে সেখানে চারটি উপজেলা থেকে কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি। অথচ রাঙামাটি সদর উপজেলা থেকে ৫জন নারী ও ৪জন পুরুষ মোট নয়জন সদস্য রাখা হয়েছে। যাদের রাখা হয়েছে তারা পতিত সরকারে প্রতিনিধি, দোসর, হত্যা মামলার পলাতক আসামী, পার্বত্য উপদেষ্টার কর্মচারী ও আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। আমরা এদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আত্মহুতি দেয়া শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানী করা হয়েছে।
এছাড়াও রাঙামাটির আদালতে পিপি, এপিপি, অতিরিক্ত পিপি নিয়োগেও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ায় ছাত্র জনতার রক্তের সাথে বেইমানী করা হয়েছে। এসব নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় রাঙামাটির আদালতে পিপি, এপিপি, অতিরিক্ত পিপি নিয়োগের দাবি জানানো হয়। চার উপজেলাকে বঞ্চিত করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে স্বজনপ্রীতি এবং অনিয়মের স্বর্গভূমিতে পরিণত করতে শুধুমাত্র রাঙামাটি সদর উপজেলা থেকে নয়জনকে সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
মানববন্ধনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করে বঞ্চিত চার উপজেলা হতে প্রতিনিধি নিয়োগ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন এবং রাঙামাটির আদালতে নিয়োগকৃত পিপি, এপিপি ও অতিরিক্ত পিপি নিয়োগের দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠনে বঞ্চিত কাউখালী, বরকল, জুড়াছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলা থেকে প্রতিনিধি অন্তভুক্ত করার দাবীতে ইতিমধ্যে সাংবাদিক সন্মেলন, প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে।
মানববন্ধনে জানানো হয়, অন্তর্বর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে বঞ্চিত চার উপজেলা কাউখালী, বরকল, জুড়াছড়ি ও রাজস্থলী থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে পুর্নগঠন করা না হলে ভবিষতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।