ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
কমলগঞ্জে ২০ দরিদ্র অসহায় শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান যশোর আইটি পার্ক বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক ক্ষতিপূরণ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিক আব্দুস শুকুরের উপর শ্রমিক লীগ নেতা ও তার পরিবারের সন্ত্রাসী হামলা মিতা রাণীর পরলোকগমন: সাংবাদিক নেতাদের শোক ডিমলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্লকেড কর্মসূচি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজা গ্রেফতার  মামলা করলেন সারজিস নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে মৌলভীবাজারে দেড় কোটি টাকার সিগারেট পোড়ালো বিজিবি “মেয়েদের মন, ব্রেক আপ” নামক পিঠার স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে গুরুদয়াল কলেজে ১৬ বছর পর কারামুক্ত হলেন বিডিআরের ১৬৮ সদস্য ফখরুলের বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ

আত্মগোপনে থেকেও সাবেক এমপি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ক্ষমতার দাপটে অনুমতি ছাড়াই কাটা হচ্ছে মাটি-বালু

৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা মৌলভীবাজার-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান অলিলা গ্লাস ফেক্টরির দ্বিতীয় কারখানা স্থাপনে জমি ভরাটে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরের অনুমতি ছাড়াই দেদারছে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের কৃষি জমি ও পাহাড়ী ছড়া, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান জিল্লুর। তবে আগে থেকে ওই এলাকার মানুষকে জিম্মি করে অনুমতি ছাড়া অবৈধ মাটি আর বালু কাটায় কোন প্রভাব পড়েনি। বরং চলমান রয়েছে। ক্ষমতার দাপটে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মুখ না খুললেও এখন সাহস করে কথা বলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনয়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের একপাশে রয়েছে অলিলা গ্লাস ফেক্টরির মূল কারখানা। আর সড়কের ঠিক উল্টো পাশে সাতগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম লৈয়ারকুল এলাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে অলিলা গ্লাস ফেক্টরির দ্বিতীয় কারখানা নির্মানে তৈরি হচ্ছে বড় বড় অবকাঠামো। কৃষি জমিতে স্থাপন করা কারখানার জমি ভরাটে সেখানে একের পর এক দানব আকৃতির ড্রামট্রাক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালু আর মাটি। প্রতিটি ড্রামট্রাকে অন্তত ৭ শ থেকে ৮শ ফুট বালুর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বিশাল আকৃতির এক্সেভেটর দিয়ে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার এই কাজ। যা বর্তমানেও চলমান।

জমির মালিকানা নিজের হলেও বালু ও মাটি কাটতে প্রয়োজন হয় সরকারী অনুমতির। তবে এসব মাটি আর বালু কাটতে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় ভুমি অফিস,পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কোন দফতর থেকেই অনুমতি নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

সরেজমিন অলিলা গ্লাস ফেক্টরির দ্বিতীয় কারখানা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে পরিচয় দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি প্রথমে বাধা দিলেও পরে প্রবেশ করতে দেন। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ড্রামট্রাক ভরে একের পর একর বালু ও মাটি ফেলা হচ্ছে অভ্যন্তরে। তবে এ বিষয়ে সেখানকার দ্বায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি কোন কথা বলতে চাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, এ বিষয়ে তার কথা বলার কোন অনুমতি নেই।

স্থানীয়রা বলছেন একদিকে শিল্পপতি, সাবেক এমপি আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে এলাকার মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুরু করেন মাটি আর বালু কাটার কাজ। বিরামহীন মাটি কাটার ফলে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ী ছড়ার পাড় ধসে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের কৃষি জমিও। স্থানীয়রা বলছেন প্রভাবশালী হওয়ায় তারা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা রুশমত আরী বলেন, তারা আমার ঘরের সীমানা পর্যন্ত মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখন বর্ষা আসলেই পানির স্রােতে বাড়িঘর ছড়ায় নিয়ে যাবে। কারণ মাটি কেটে অনেক গহীন গর্ত তৈরি করা হয়েছে। তারা ক্ষমতার বলে এসব করেছে, এলাকার কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করেনি।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া মাটি কাটা কিংবা বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। এটা সে যত বড় শক্তিশালী কিংবা বড় মাপের মানুষই হোক না কেন, কারও পক্ষে নির্ধারিত জায়গা থেকে অথবা লিজ না নিয়ে নির্ধারিত তফসিলভুক্ত জায়গা থেকে ছাড়া অন্য কোন জায়গা থেকে বালু তোলার কোন সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টা দেখে দ্রুতই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

অবৈধ মাটি আর বালু কাটার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জেনে বলতে পারবো, যদি তারা অবৈধভাবে মাটি কাটে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মগোপনে থেকেও সাবেক এমপি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ক্ষমতার দাপটে অনুমতি ছাড়াই কাটা হচ্ছে মাটি-বালু

আপডেট সময় ০৮:৩১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা মৌলভীবাজার-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান অলিলা গ্লাস ফেক্টরির দ্বিতীয় কারখানা স্থাপনে জমি ভরাটে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরের অনুমতি ছাড়াই দেদারছে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের কৃষি জমি ও পাহাড়ী ছড়া, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান জিল্লুর। তবে আগে থেকে ওই এলাকার মানুষকে জিম্মি করে অনুমতি ছাড়া অবৈধ মাটি আর বালু কাটায় কোন প্রভাব পড়েনি। বরং চলমান রয়েছে। ক্ষমতার দাপটে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মুখ না খুললেও এখন সাহস করে কথা বলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনয়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের একপাশে রয়েছে অলিলা গ্লাস ফেক্টরির মূল কারখানা। আর সড়কের ঠিক উল্টো পাশে সাতগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম লৈয়ারকুল এলাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে অলিলা গ্লাস ফেক্টরির দ্বিতীয় কারখানা নির্মানে তৈরি হচ্ছে বড় বড় অবকাঠামো। কৃষি জমিতে স্থাপন করা কারখানার জমি ভরাটে সেখানে একের পর এক দানব আকৃতির ড্রামট্রাক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালু আর মাটি। প্রতিটি ড্রামট্রাকে অন্তত ৭ শ থেকে ৮শ ফুট বালুর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বিশাল আকৃতির এক্সেভেটর দিয়ে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার এই কাজ। যা বর্তমানেও চলমান।

জমির মালিকানা নিজের হলেও বালু ও মাটি কাটতে প্রয়োজন হয় সরকারী অনুমতির। তবে এসব মাটি আর বালু কাটতে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় ভুমি অফিস,পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কোন দফতর থেকেই অনুমতি নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

সরেজমিন অলিলা গ্লাস ফেক্টরির দ্বিতীয় কারখানা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে পরিচয় দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি প্রথমে বাধা দিলেও পরে প্রবেশ করতে দেন। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ড্রামট্রাক ভরে একের পর একর বালু ও মাটি ফেলা হচ্ছে অভ্যন্তরে। তবে এ বিষয়ে সেখানকার দ্বায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি কোন কথা বলতে চাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, এ বিষয়ে তার কথা বলার কোন অনুমতি নেই।

স্থানীয়রা বলছেন একদিকে শিল্পপতি, সাবেক এমপি আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে এলাকার মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুরু করেন মাটি আর বালু কাটার কাজ। বিরামহীন মাটি কাটার ফলে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ী ছড়ার পাড় ধসে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের কৃষি জমিও। স্থানীয়রা বলছেন প্রভাবশালী হওয়ায় তারা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা রুশমত আরী বলেন, তারা আমার ঘরের সীমানা পর্যন্ত মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখন বর্ষা আসলেই পানির স্রােতে বাড়িঘর ছড়ায় নিয়ে যাবে। কারণ মাটি কেটে অনেক গহীন গর্ত তৈরি করা হয়েছে। তারা ক্ষমতার বলে এসব করেছে, এলাকার কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করেনি।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া মাটি কাটা কিংবা বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। এটা সে যত বড় শক্তিশালী কিংবা বড় মাপের মানুষই হোক না কেন, কারও পক্ষে নির্ধারিত জায়গা থেকে অথবা লিজ না নিয়ে নির্ধারিত তফসিলভুক্ত জায়গা থেকে ছাড়া অন্য কোন জায়গা থেকে বালু তোলার কোন সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টা দেখে দ্রুতই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

অবৈধ মাটি আর বালু কাটার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জেনে বলতে পারবো, যদি তারা অবৈধভাবে মাটি কাটে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।