রাঙামাটি পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক শূন্য। তিন জেলায় পর্যটন খ্যাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান। এই মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলার রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে লক্ষ লক্ষ পর্যটকের আগম ঘটে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে গত আগষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেপ্টেম্বর মাসে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালি সংঘাতের কারণে চরম প্রভাব পড়েছে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন খ্যাতগুলোতে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন নিরাপত্তাজনিত কারনে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হতে অর্নিদিষ্টকালের জন্য সাজেক ভ্যালিতে পর্যটক যাওয়া নিষেধ করা হয়। এতে ভেঙে পড়ে সাজেকের পর্যটক শিল্প। একইভাবে গত ৮ অক্টোবর হতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটি, বান্দবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় পর্যটক আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটক আসা না আসা নিয়ে তিন জেলার পর্যটন ব্যবসায়িরা জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেও তার কোন সুরাহ হয়নি। ৩১ অক্টোবর আগ পর্যন্ত পর্যটক আসা নিষেধ থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, পাহাড়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে উপরের নির্দেশে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক আসা নিষেধ থাকবে। পাহাড়ের নিরাপত্তার উপর নির্ভর করবে নিষেধাজ্ঞা বাড়বে কিনা। তবে সব কিছু বিবেচনা করে এবং পর্যটকদের ৩১অক্টোবর খুলে দেওয়া হতে পারে। পর্যটন ব্যবসায়ীদেও কথাবার্তা বিবেচনা করা হবে।
স্থানীয় লোকজন ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, গত আগষ্টে জাতীয় রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে পাহাড়ের পর্যটন খ্যাতে। তারপর সেপ্টেম্বরে প্রভাব পড়েছে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালি মধ্যে বিরাজমান সংঘাত সৃষ্টি হয়ে পাহাড়ে পর্যটন খ্যাতে কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন গত ৮ অক্টোবর হতে ৩১ পর্যন্ত পর্যটক না আসতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
রেস্তোরা ব্যবসায়ি নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের ও ব্যবসা বাণিজ্য নির্ভর করে পর্যটকদের উপরে। পাহাড়ে পর্যটক না আসলে আমরা কীভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করবো। তিন পার্বত্য জেলা হলো পর্যটক নির্ভর ব্যবসা বাণিজ্য। এখানে পর্যটক না আসলে ব্যবসা বাণিজ্য তেমন হয় না। গত ১-৩ মাস ধরে আমাদের কোন ব্যবসা বাণিজ্য নাই। পর্যটকদের ও সাথে সম্পৃক্ত এখানকার সকল ব্যবসা বাণিজ্য।
সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি শহরের ৬৫ টি হোটেল-মোটেল ও ১৭ টি ইকো রিসোর্ট এবং কাপ্তাই ও সাজেকে ভ্যালির ১৩২ টি কটেজ সম্পূর্ণরূপে পর্যটক শূন্য। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, পাহাড়িদের তৈরি পোষাক, সড়ক ও নৌযানসহ অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ জানান, সহিংসতার পর থেকে সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে। সহিংসতার ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সাজেক ভ্রমণে ২৫ সেপ্টেম্বর হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিরুৎসাহিত করা হয় যা পর্যটন ব্যবসার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সাজেকের ১২৭ টি রিসোর্ট এবং ১১৬ টি রেস্টুরেন্ট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। ফলে এখানকার পর্যটন ব্যবসায়িরা দৈনিক ৫০-৬০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রাঙামাটি হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটক আসা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সেজন্য দূর-দূরান্ত হতে পর্যটক আসছে না। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন হলি ডে কমপ্লেক্সে গত ৮ অক্টোবর হতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। যদি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পর্যটক নিরুৎসাহিত তুলে নেওয়া হয় তাহলে আশা করি লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ও হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি মো. শামীম খান বলেন, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা হলো পর্যটক বান্ধব এলাকা। এখানে পর্যটক না আসলে সকল ব্যবসা বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়ে। পর্যটক নিরুৎসাহিত তুলে নিতে আমরা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসন এখনো তা প্রত্যাহার করেনি। তাই পর্যটন খ্যাতে কোটি কোটি টাকা লোকসান।