শীতের আগমনী বার্তায় মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলার লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। শীতের আগমনের পদধ্বনিতে প্রকৃতি সেজে উঠেছে নতুন আমেজে। শীতের বুড়িটা কোনো কোনো এলাকায় জেঁকে বসার প্রস্তুতিও নিচ্ছে জোরেশোরে। কাক ডাকা ভোরে গাছপালা ও ঘাসের সবুজ গালিচায় মুক্তাবিন্দুর মতো শিশির পড়তে শুরু করেছে।
সাধারণ মানুষ শীত জেকে বসার আগেই লেপ-তোষক তৈরির প্রস্তুতি শুরু করায় মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাড়া-মহল্লায় লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। শীত নিবারণের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ তোষক বানাতে ক্রেতারাও ভিড় করছে দোকানগুলোতে।
মৌলভীবাজারে এবারের চিত্র ভিন্ন। নতুন করে যেমন লেপ-কম্বল কেনা হয় তেমনি পুরানো লেপ নতুন করে বানিয়েও নেন অনেকে। কিন্তু বাজারে লেপ-তোষকের চেয়ে কম্বলের চাহিদা বেশি। অপর দিকে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তদের লক্ষ্য করা যাচ্ছে উপজেলার স্থায়ী বড় বড় কাপড়ের দোকানগুলোতে কম্বল কিনতে। তবে তুলা, লেপের কাপড়, ফোম এবং মজুরী সব মিলে গত বছরের তুলনায় এ বছর খরচ কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক লেপ-তোষকের দোকান রয়েছে। শীত মৌসুমে ব্যবসায়ীরা রেডিমেড লেপ তোষক তৈরি করে তা বিক্রি করছেন। সেই সাথে অর্ডার ও অনেক বেশি পাচ্ছেন। মৌলভীবাজারের লেপ তোষকের কারিগর ও পাড়া-মহল্লার মানুষ বাড়িতে বাড়িতে লেপ-তোষক তৈরি করছে। লেপ-তোষক তৈরির ব্যবসায়ীদের দম ফেলার সময় নেই। কাজের চাপ এতই বেশি যে সময়মত গোসল-খাওয়ারও ঠিক নেই। তবে এত ব্যস্থতা থাকলেও মৌসুমে একটু বাড়তি আয় তাদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। এসব দোকানে প্রায় কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক শত মানুষের। অন্যদিকে, অনেক পরিবারের সদস্যরা তাদের উঠিয়ে রাখা লেপ-তোষক বের করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি শিমুল তুলা ৪০০ টাকা ও বিচি ছাড়া শিমুল তুলার কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা। এসব তুলায় বালিশ তৈরি করেন সমাজের ধনী লোকেরা। তবুও বর্তমান বাজারে ৫ হাত বাই ৫ হাত লেপ তৈরি করতে ১২০০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। যা গতবারের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। তবে বিভিন্ন রকমের দামী-কমদামী তুলার প্রকারভেদে লেপ-তোষকের দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।
পৌর এলাকার সাহেদা খাতুন বলেন, নিজেদের পুরনো ব্যবহারী কাঁথা সেলাই করে নিচ্ছেন। লেপ-তোষক বানানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই পুরোনো কাথাকে মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করছেন তারা। তারা জানান, আমরা গরিব মানুষ বাবা, নূন আনতে পান্তা ফুরায়। ভাতই ঠিক মতো খাবার পাই না, আর গায়ে দেওয়া লেপ বানাবো কীভাবে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ আমাদের ঠান্ডা কম লাগে।
লেপ-তোশক তৈরির কারিগররা জানান, এলাকার সচ্ছল ব্যক্তিরা প্রায় প্রতি বছরই নতুন লেপ কেনেন। শীতের আগেই নতুন লেপ ও তোশকের অর্ডার দেন তারা। তাই, হাতে প্রচুর কাজ তাদের। এসব কাজ করেই ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। আর নিম্ন আয়ের লোকজন শিমুল তুলা এড়িয়ে চলেন। কারণ শিমুল তুলা দিয়ে তৈরি করা লেপের খরচ অনেক বেশি। এর অর্ধেক দামে গার্মেন্টস তুলায় তৈরি লেপ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি লক্ষ করা যায়, বাজার-মহল্লার দোকান ছাড়াও দোকানিরা ফেরিওয়ালার মাধ্যমে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় লেপ-তোশক ফেরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করছেন।
উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের খাদিজা বেগম বলেন, ঠান্ডা বাড়ছে, তাই পুরাতন লেপের তুলা বদলিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে সেলাই করে নিচ্ছি। পরে ঝমেলা হয়, তাই আগাম লেপ-তোষক বানাচ্ছি।
মৌলভীবাজার সেন্ট্রাল রোডের লেপ-তোষকের কারিগর আইয়ুব মিয়ার বলেন, তার দোকানে প্রতিটা তোষক ৮‘শ থেকে ১৫‘শ টাকা, বড় তোষক ২৫‘শ টাকা, লেপ ৮‘শ থেকে ১‘শ টাকা, গার্মেন্টস তুলা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও শিমুল তুলা ৬‘শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।