স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা। ৬০ এর দশকে পল্লীপুর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় এর পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের সীমানায় রয়েছে এলজিইডি’র বিশাল কর্মযজ্ঞ। পল্লী অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এলজিইডি যে অবদান রেখেছে তা আজ দৃশ্যমান। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসব অবকাঠামোর অবদান অপরিসীম। প্রত্যন্ত পল্লীর মানুষ আজ সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে পল্লীর এসব অবকাঠামো ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
গ্রামীন অবকাঠাম উন্নয়নের পাশাপাশি এলজিইডি শহর ও নগর অঞ্চলেও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নগর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ কে (পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) কারিগরি সহায়তা প্রদান ও এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যবস্থা ও দক্ষতা উন্নয়নেও এলজিডি সম্পৃক্ত। দেশের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতেও এলজিডি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সারাদেশে ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় অংশীজনদের অংশগ্রহণে প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এসব অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ কে বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদান এলজিইডির কর্মতালিকার অংশ। একইসঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে এলজিইডি। উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অবকাঠামোর তথ্য ভান্ডার, ম্যাপ, কারিগরি বিনির্দেশ (টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন), ম্যানুয়াল ইত্যাদি প্রণয়ন এবং দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে সংস্থার নিজস্ব কর্মকর্তা /কর্মচারী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এলজিইডি।
বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ বাংলাদেশ সময়কে বলেন ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় স্হানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পরামর্শে এলজিইডির উন্নয়নের ধারা এগিয়ে যাবে।তিনি বলেন,এই মূহুর্তে এলজিইডিতে শৃঙ্খলা আনতে হবে,নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া প্রয়োজন এবং যে সকল প্রকল্প পাইপলাইনে আছে সেগুলো দ্রুত ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের সাথে নেগোসিয়েশন করা দরকার।তবে,কিছু বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিলো বর্ষার কারনে অনেক কাজ বাস্তবায়ন করা যায়নি এখন শুষ্ক মৌসুমে দ্রুত এগুলো বাস্তবায়ন করে ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের নজরে আনতে হবে।এছাড়া,আমাদের এলজিইডির মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার প্রকল্প চলমান। যেসকল এলাকায় ৫০-৬০ বছর যাবৎ বিদ্যালয় আছে বিদ্যালয়ের কাগজ পত্র সরকারের নামে অথচ আমরা যখন পুরনো স্কুল ঘর ভেঙ্গে নতুন ভাবে স্কুল ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার করা উদ্যোগ নিয়েছি ঠিক তখনই এলাকার বিভিন্ন লোকজন বাধা দিচ্ছে এই জমির মালিক তাঁরা নিজেদের দাবী করে মামলা করে দিচ্ছে।এরকম প্রায় ৭০ টি স্কুলের জমির অভিযোগ দেয়া হয়েছে।এদিকে বিশ্ব ব্যাংক বলছে আমরা আরো ৭০০ মিলিয়ন টাকা দিবে শিক্ষা খাতে অর্থাৎ ৮ হাজার কোটি টাকা দিবে তবে চলমান কাজ গুলো সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন,এই সকল অভিযোগের সমাধানের বিষয়ে আমরা আমাদের মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসক স্হানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা চলমান রেখেছি।বিশ্ব ব্যাংক এলজিইডির কাজের গুণগত মানে সন্তুষ্ট বলেই তাঁরা আমাদের সাথে কাজ করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন,সুপার ব্রীজ প্রকল্পেও কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে জমি অধিগ্রহন নিয়ে।কারন, জমি অধিগ্রহনের টাকা বরাদ্দ নেই এই কারনে।কাজের সার্বিকমান আমরা গুনগত টেকসই করছি।আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে পিরোজপুর জেলার কিছু কাজের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী রুটিন দায়িত্বের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,এই সকল বিষয়ে স্হানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে পিরোজপুর জেলায় নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী পোষ্টিং দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন,এলজিইডি সংশ্লিষ্ট কেউ অপরাধ বা অনিয়ম করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।