ঢাকা ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৯টি ককটেল ও ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার বগুড়ায় করতোয়া নদীর ধারে মুখ ঝলসানো অর্ধগলিত লাশ পিরিজপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি: অভিযুক্ত বিএনপি নেতার ছেলে লালপুরে আইনজীবীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ৩জন আহত বগুড়ায় ‘লাশ উত্তোলনের নামে’ প্রতারণা, তিন ভাই গ্রেপ্তার সিংড়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা সুনামগঞ্জের বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা শহরের কাছাকাছি স্থাপনের জন্য ৬দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন পাংশায় বসত ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে যুবকের আত্মহত্যা কাবিখা প্রকল্পে কাগজে কলমে উন্নয়ন, মাঠে দুর্নীতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা সেমিনার ও ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহে স্পেশাল জজের বাসা চুরি। নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ এক চোর গ্রেফতার ৩১ দফা বাস্তবায়নে প্রস্তুত বিএনপি: নীলফামারীতে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত

যশোর ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে তিন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পরিদর্শন

যশোরের ভবদহ এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে এবার নতুন আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার সকালে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা একযোগে ভবদহ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শনকালে তারা চলমান প্রকল্পসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অবঃ)। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০টায় নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করার পর সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভবদহের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন তারা। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন এবং দুর্ভোগে পড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানসমূহ পরিদর্শন ও মতামত গ্রহণ করা হয়। পরিদর্শন শেষে বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সুধীসমাজ ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টারা।

ভবদহ এলাকা অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর (যশোর) এবং ডুমুরিয়া ও ফুলতলা (খুলনা) উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় শতাধিক গ্রামের বাড়িঘর, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও মাছের ঘের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার দশকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি তাদের। তাই তারা ‘টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম)’ চালু এবং আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন।

ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা এবং বামনেতা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “তিন উপদেষ্টার একসঙ্গে আগমন এবার আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতিফলন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর আগেও এসে কথা দিয়েছেন ভবদহের স্থায়ী সমাধানের। সেই ধারাবাহিকতায় আমডাঙ্গা খাল খননের টেন্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের মূল দাবি ছিল সেচ পাম্প বন্ধ করে টিআরএম চালু করা। সেটিও এবার বাস্তবায়নের পথে।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ে যারা প্রকল্পের নামে লুটপাট করেছে, তাদের বিচার চাই। উপদেষ্টাদের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।”

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, “উপদেষ্টাদের নির্দেশে ইতিমধ্যে কিছু পানিনিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। এবার কৃষি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও এসেছেন। আমরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ এবং দুর্নীতির বিচার চাইছি।”

উপদেষ্টাদের এমন সম্মিলিত পদক্ষেপে ভবদহবাসী এবার কার্যকর এবং টেকসই সমাধানের প্রত্যাশা করছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৯টি ককটেল ও ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার

Verified by MonsterInsights

যশোর ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে তিন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পরিদর্শন

আপডেট সময় ০২:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

যশোরের ভবদহ এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে এবার নতুন আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার সকালে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা একযোগে ভবদহ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শনকালে তারা চলমান প্রকল্পসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অবঃ)। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০টায় নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করার পর সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভবদহের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন তারা। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন এবং দুর্ভোগে পড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানসমূহ পরিদর্শন ও মতামত গ্রহণ করা হয়। পরিদর্শন শেষে বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সুধীসমাজ ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টারা।

ভবদহ এলাকা অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর (যশোর) এবং ডুমুরিয়া ও ফুলতলা (খুলনা) উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় শতাধিক গ্রামের বাড়িঘর, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও মাছের ঘের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার দশকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি তাদের। তাই তারা ‘টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম)’ চালু এবং আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন।

ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা এবং বামনেতা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “তিন উপদেষ্টার একসঙ্গে আগমন এবার আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতিফলন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর আগেও এসে কথা দিয়েছেন ভবদহের স্থায়ী সমাধানের। সেই ধারাবাহিকতায় আমডাঙ্গা খাল খননের টেন্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের মূল দাবি ছিল সেচ পাম্প বন্ধ করে টিআরএম চালু করা। সেটিও এবার বাস্তবায়নের পথে।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ে যারা প্রকল্পের নামে লুটপাট করেছে, তাদের বিচার চাই। উপদেষ্টাদের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।”

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, “উপদেষ্টাদের নির্দেশে ইতিমধ্যে কিছু পানিনিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। এবার কৃষি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও এসেছেন। আমরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ এবং দুর্নীতির বিচার চাইছি।”

উপদেষ্টাদের এমন সম্মিলিত পদক্ষেপে ভবদহবাসী এবার কার্যকর এবং টেকসই সমাধানের প্রত্যাশা করছে।