ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসবে না।
বুধবার (১২ মার্চ) ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পেজেশকিয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হুমকির মুখে ইরান কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যাবে না। সম্প্রতি ট্রাম্প ইরানকে নতুন পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে তেহরান জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে কোনো চিঠি পায়নি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বক্তব্যে পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা এটা মেনে নিতে পারি না যে, যুক্তরাষ্ট্র শুধু আমাদের আদেশ দেবে ও হুমকি দেবে। এমনকি আমি আপনার সঙ্গে আলোচনাও করব না। আপনি যা ইচ্ছা করতে পারেন।”
এ বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কোনো সমাধান নয়। তারা আলোচনার নামে এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।”
একদিকে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও, তিনি তার প্রথম মেয়াদে ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি পুনরায় চালু করেছিলেন। এর আওতায় ইরানকে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং তাদের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ইরানকে দুটি উপায়ে মোকাবিলা করা যেতে পারে- সামরিকভাবে, অথবা তারা একটি চুক্তি করবে যাতে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত থাকে।”
ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে এসেছে। তবে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে ৯০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়।
২০১৯ সাল থেকে ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। এর এক বছর আগে, ২০১৮ সালে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই নতুন বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পেজেশকিয়ানের মন্তব্য এবং ট্রাম্পের কঠোর নীতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।