৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) এর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) মো. সরদার কেরামত আলী একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং কর্ম পারদর্শিতার দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে স্থাপন করেছেন। প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিআরডিবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন দেশ পেয়েছি, এদেশের তরুণ উদ্যমী ছাত্রসমাজ ও জনতা বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে একটি বৈষম্যবিরোধী নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারুণ্যের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করা উচিত।
ছাত্র-জনতার রক্তের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আজকের প্রশাসন চলছে। তাদেরকে অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই বলে আমি মনে করি। এছাড়াও মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয়ের নির্দেশে বিআরডিবিকে জনবান্ধব সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
বঞ্চিতদের প্রসঙ্গে বলেন, বঞ্চিতদের লটারি দিয়ে, প্রায়োরিটি দিয়ে এবং তাদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী যোগ্যতম জায়গায় পাঠানো এবং যারা তিন বছরের অধিক একই স্থানে কাজ করছেন তাদেরকে বিবেচনা করে পোস্টিং নির্ধারণ করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের বর্তমান সচিব মহোদয় যথেষ্ট সতর্ক আছেন। আমি তার সহযোগিতায় আমার কর্মকাণ্ড এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে এসেছি, আমি যদি ভালো কাজ করি, আমার যারা অফিসার আছেন তারা আমার সামনে ভালো হয়ে দাঁড়াবেন। আমি যদি ভুল করি, সবাই বিরক্ত হয়ে বলবে আমরা মহাপরিচালককে চাই না। আমি এখানে কারো আনুগত্য বা দয়া নিতে আসি নাই। যেটা আইনগত, ১০০% সঠিক সেটা করতে এসেছি। I Will try my best to ensure a free fair administration.
তিনি আরো বলেন, বিআরডিবিতে মানবসেবার প্রচুর সুযোগ আছে যা আমরা কাজে লাগাবো। আমরা পুরো প্রশাসন এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, বিআরডিবিকে বেস্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এবং আমরা আমাদের নিজেদেরকে এর সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। কিন্তু যারা অভিযুক্ত, দুর্নীতিবাজ তারা মোটামুটি একজনও স্বপদে থাকার অবস্থানে নাই। আমি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, তারপরও সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে বিআরডিবিকে একটি মডেল হিসাবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
বিগত সময়ের অপশক্তি ও সিন্ডিকেট প্রতিরোধ সম্পর্কে সরদার মো. কেরামত আলী বলেন, আমি আমার জায়গায় থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নির্দেশক্রমে বিআরডিবির সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমন্বয়ে আমরা দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার বিষয়ে জিরো টলারেন্সের ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয় অত্যন্ত ভালো মনের, ন্যায় পরায়ণ ও সাহসী মানুষ হওয়ার কারণে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ করতে পারবো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে যত কর্মকাণ্ডই হয়েছে তার শতভাগই মনগড়া নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে ইচ্ছামাফিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধ চরিতার্থে জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর সাথে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সঙ্গবদ্ধ একটি অপতৎপরতাকারী শক্তি সম্পৃক্ত ছিল। যাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিআরডিবির মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) মো. সরদার কেরামত আলী বাংলাদেশ সময়কে বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অঙ্গীকার। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বি-স্তর সমবায় তথা কুমিল্লা পদ্ধতির সমবায় ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন সেবা প্রদান করে আসছে। বিআরডিবির কার্যক্রমের অন্যতম কৌশল হলো পল্লী অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারী কৃষক, বিত্তহীন পুরুষ ও মহিলাদেরকে সমবায় সমিতি এবং অনানুষ্ঠানিক দলের মাধ্যমে সংগঠিত করে পুঁজি গঠন, আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে প্রশিক্ষণ প্রদান, আর্থিক স্বাবলম্বী ও স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে টেকসই প্রযুক্তি হস্তান্তর, উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ সাধন ইত্যাদি।
বিআরডিবি সত্তরের দশক থেকে দেশের পল্লী অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে সময়ের প্রয়োজনে দ্বি-স্তর সমবায়ের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক দলীয় কার্যক্রম চালু করে। একই সাথে বিআরডিবি ব্যাংক অর্থায়িত কৃষি ঋণের পাশাপাশি সরকারের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি চালু করে। বিআরডিবি বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণে দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান। দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিআরডিবি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ইনশাআল্লাহ আপনি পারবেন স্যার৷ আপনার জন্য অফুরন্ত দোয়া এবং শুভকামনা