ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে রেকর্ড করা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সংখ্যা ১১৬৫টি, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট’-এর অধীনে পরিচালিত এই গবেষণায় উদ্বেগজনক এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০২৪ সালে ভারতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং ১০ শতাংশ খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিজেপি শাসিত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রেকর্ড করা হয়েছে, বিশেষত উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে এই ঘটনা বেশি ঘটেছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। মোট ঘটনার ৩২ শতাংশ নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়ের মধ্যে ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নির্বাচনী প্রচারণা এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের একটি অংশ হয়ে উঠেছে।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, ২৫৯টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সরাসরি সহিংসতাকে উসকে দেওয়ার মতো ছিল, যা মোট ঘটনার ২২ শতাংশ। ২০২৩ সালের তুলনায় এই ধরনের বক্তব্যের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ‘ডেঞ্জারাস স্পিচ প্রজেক্ট’-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, এই ধরনের বক্তব্য জনসাধারণকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে।
এছাড়া, সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ছড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোরও কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৯৫টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স (সাবেক টুইটার) মাধ্যমে শেয়ার বা লাইভ-স্ট্রিম করা হয়েছে। যদিও এই প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে, বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণার পরিচালক রাকিব হামিদ নাইক বলেন, “এটি এখন শুধু সম্প্রদায়গত মেরুকরণের হাতিয়ার নয়, বরং ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচনী প্রচারণা, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং সামাজিক বাস্তবতার অংশ হয়ে গেছে।”
এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।