ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
অবৈধ ইটভাটার মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক জরিমানা ও জ্বালানি কাঠ জব্দ মিরপুরে ‘বসন্ত ঈদ উৎসব ২০২৫’ মেলা, থাকছে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনী ২০০১ সালের পরে দেশে যা নির্বাচন হয়েছে, তা তামাশার নির্বাচন হয়েছে: এম নাসের রহমান রোজা না রাখায় বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে উঠবস করালেন বণিক সমিতির সভাপতি মুক্তাগাছায় পশুর হাটে হামলা, ইজারার লক্ষাধিক টাকা লুট পাবনা পৌরসভার সাপ্লাই পানিতে ময়লা ও তীব্র দুর্গন্ধ, অতিষ্ঠ শহরবাসী জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান সমস্যা সামাধান করতে হবে: মাওলানা মুসা বিন ইযহার বগুড়ায় গলায় চাকু ঠেকিয়ে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই নরসিংদীতে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার পাইকগাছায় চিংড়ি ঘেরে পানি তুলতে না দিয়ে  চাঁদার দাবির প্রতিবাদে মানববন্ধন লক্ষ্মীপুরে সেমাই উৎপাদনে ক্ষতিকারক রং, ব্যবসায়ীকে জরিমানা লাখ টাকা তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

হোসেনপুরে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকের মুখে হাসি

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে চাষ করে উপজেলার তিন ফসলি ধানি জমি থেকে বাড়তি ফসল হিসেবে বিপুল পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হচ্ছে। ফলে বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন এখনকার কৃষকরা। আরো বৃহৎ পরিসরে এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে। কয়েক বছর আগে এই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এই পদ্ধতি এখন কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জমিতেই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার নান্দানিয়া, নারায়ন ডহর, বর্শিকুড়া, জগদল, গণমানপুরুয়া এলাকায় জমিতে কোনো প্রকার চাষ না করেই সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অল্প কয়েকদিন বাদেই শুরু হবে সরিষা কাটার কাজ।

কৃষকরা জানান, হাল চাষের খরচ না থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ কাটা-মাড়াই করে ফসল ঘরে তুলতে তাদের সম্ভাব্য খরচ হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা সরিষার ফলন যদি ৭ থেকে ৮ মণ হয় এবং বর্তমান প্রতি মণ সরিষার বাজার যদি ২ হাজার ৫’শ থেকে ২ হাজার ৮’শ টাকা ঠিক থাকে তাহলে প্রতি বিঘা সরিষা বিক্রয় হবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা এবং খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তাদের লাভ হবে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা।

কৃষকরা আরো জানান, বিনা চাষের কারণে একদিকে যেমন খরচ কম হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি সঠিক সময়ে চাষ করায় বছরে একই জমিতে তিনটি ফসল থেকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ আয় করছেন তারা।

নান্দানিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, আমন ধান কাটার ১৫দিন আগে ক্ষেতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে ধান কেটে নিলে সরিষা গাছ সতেজ হয়ে উঠে।

আরেক চাষি মুনসুর আলম জানান, জমি থেকে ফসল কাটতে ১০-১২দিন কেটে যায়। এরপর জমি চাষযোগ্য করতে আরো ১০-১২দিন চলে যায়। ফলে চাষ করে সরিষা বুনলে সরিষা তুলে আর বোরো আবাদ সম্ভব হতো না। এছাড়া বিঘা প্রতি জমি চাষের খরচও পড়ে যায় হাজার টাকার উপরে। তাই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করায় চাষের খরচ বেঁচে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচও কমে আসছে।

নারায়নডহর গ্রামের কৃষক এখলাস উদ্দিন জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে প্রতি বিঘায় সরিষা পাওয়া যায় ৪ মণ, যার বাজার মূল্য ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোদাসিল হায়দার আলমগীর জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকরা দিন দিন বিনা চাষে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

তিনি বলেন, আগামীতে অধিকাংশ তিন ফসলি ধানি জমি বিনা চাষে সরিষা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির জানান, এ এলাকায় আগে এক থেকে দুই ফসল চাষ হতো, ওইসব জমিতে এখন তিন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। গতবার সরিষা চাষে কৃষক লাভবান হয়েছে। আমরা আশা করছি এবারো তারা লাভবান হবেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অবৈধ ইটভাটার মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক জরিমানা ও জ্বালানি কাঠ জব্দ

Verified by MonsterInsights

হোসেনপুরে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকের মুখে হাসি

আপডেট সময় ০৬:০৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে চাষ করে উপজেলার তিন ফসলি ধানি জমি থেকে বাড়তি ফসল হিসেবে বিপুল পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হচ্ছে। ফলে বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন এখনকার কৃষকরা। আরো বৃহৎ পরিসরে এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে। কয়েক বছর আগে এই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এই পদ্ধতি এখন কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জমিতেই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার নান্দানিয়া, নারায়ন ডহর, বর্শিকুড়া, জগদল, গণমানপুরুয়া এলাকায় জমিতে কোনো প্রকার চাষ না করেই সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অল্প কয়েকদিন বাদেই শুরু হবে সরিষা কাটার কাজ।

কৃষকরা জানান, হাল চাষের খরচ না থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ কাটা-মাড়াই করে ফসল ঘরে তুলতে তাদের সম্ভাব্য খরচ হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা সরিষার ফলন যদি ৭ থেকে ৮ মণ হয় এবং বর্তমান প্রতি মণ সরিষার বাজার যদি ২ হাজার ৫’শ থেকে ২ হাজার ৮’শ টাকা ঠিক থাকে তাহলে প্রতি বিঘা সরিষা বিক্রয় হবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা এবং খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তাদের লাভ হবে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা।

কৃষকরা আরো জানান, বিনা চাষের কারণে একদিকে যেমন খরচ কম হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি সঠিক সময়ে চাষ করায় বছরে একই জমিতে তিনটি ফসল থেকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ আয় করছেন তারা।

নান্দানিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, আমন ধান কাটার ১৫দিন আগে ক্ষেতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে ধান কেটে নিলে সরিষা গাছ সতেজ হয়ে উঠে।

আরেক চাষি মুনসুর আলম জানান, জমি থেকে ফসল কাটতে ১০-১২দিন কেটে যায়। এরপর জমি চাষযোগ্য করতে আরো ১০-১২দিন চলে যায়। ফলে চাষ করে সরিষা বুনলে সরিষা তুলে আর বোরো আবাদ সম্ভব হতো না। এছাড়া বিঘা প্রতি জমি চাষের খরচও পড়ে যায় হাজার টাকার উপরে। তাই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করায় চাষের খরচ বেঁচে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচও কমে আসছে।

নারায়নডহর গ্রামের কৃষক এখলাস উদ্দিন জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে প্রতি বিঘায় সরিষা পাওয়া যায় ৪ মণ, যার বাজার মূল্য ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোদাসিল হায়দার আলমগীর জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকরা দিন দিন বিনা চাষে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

তিনি বলেন, আগামীতে অধিকাংশ তিন ফসলি ধানি জমি বিনা চাষে সরিষা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির জানান, এ এলাকায় আগে এক থেকে দুই ফসল চাষ হতো, ওইসব জমিতে এখন তিন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। গতবার সরিষা চাষে কৃষক লাভবান হয়েছে। আমরা আশা করছি এবারো তারা লাভবান হবেন।