ময়মনসিংহ চাঞ্চল্যকর অটোচালক আকাশ হত্যাকান্ডের ৭২ ঘন্টার মধ্যে ঘাতকচক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত অটো উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো মিলন ও রবিন। তাদেরকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৬ নভেম্বর রাতে সদরের চর সিরতা সরকারবাড়ী টেকের মাথা কালভার্ট (ব্রীজ) সংলগ্ন পাঁকা রাস্তার পূর্ব পাশে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পায় পুলিশ। খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও জেলার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও মৃতের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মৃতের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। মৃত আকাশ মিয়া চর হাসাদিয়া এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন অটো চালক। অজ্ঞাতনামা হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দ্বারা তাকে জবাই করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে তার অটো নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলটি ঘটনাস্থল হতে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয় যার নং-৬৪, তারিখ-২৭/১১/২০২৪ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড- ১৮৬০। ঘটনাটি চর সিরতাসহ সমগ্র থানা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের চৌকস এবং দায়িত্বশীল পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও চোরাই অটো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। ডিবির ওসি শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে হত্যাকান্ডের ৭২ ঘন্টার মধ্যে শুক্রবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও গার্লস স্কুলের পিছনের বস্তি থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত মো. রবিন মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্য মতে শনিবার ভোরে হত্যাকান্ডের মূল আসামী মো. মিলনকে খিলগাঁও আরেকটি বস্তি থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের তথ্যের ভিত্তিতে ভালুকার জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার জনৈক সাগর মিয়ার গ্যারেজের সামনে থেকে ঘাতক কর্তৃক ছিনিয়ে নেয়া অটো উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিবির ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, নিহত আকাশ ও তারা একই গ্রামের বাসিন্দা। মিলন ঢাকায় পোশাক শিল্পের শ্রমিক এবং রবিন চালের আড়তে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ফেইসবুকে একটি মেয়ের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে নিহত আকাশ ও মিলনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দুই মাস আগে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ বিরোধে মিলন ও রবিন আকাশকে হত্যা ও তার অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন সন্ধায় মিলন ভিকটিম আকাশকে ফোন করে তার অটো নিয়ে আসতে বলে। পরবর্তীতে আকাশ সন্ধ্যা সোয়া ৭ টারদিকে অটো নিয়ে মিলনের কাছে আসে। মিলন ও রবিন আকাশের অটোতে পরানগঞ্জ ও বোররচরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাফেরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০ টারদিকে অটোর পিছনের সিট থেকে মিলন আকাশের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে পোঁচ দেয়। পরে মৃত প্রায় আকাশকে অটো থেকে প্রথমে রাস্তায় ও পরে রবিনের সহযোগিতায় রাস্তার পার্শ্বে ধানক্ষেতে ফেলে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়।