সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের অন্যতম আলোচিত চরিত্র ও দূর্নীতিবাজ হিসেবে সর্বমহলে সমালোচিত ঢাকা ওয়াসার সাবেক ও পলায়ন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তাঁরই নিয়োগকৃত ডিএমডি আকতারুজ্জামান৷ দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে ঢাকা ওয়াসার সর্বস্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মুখে মুখে প্রশ্ন উঠে।
গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। তাঁরই বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও তাকসিম আকতারুজ্জামানকে ডিএমডি হিসেবে অর্থ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়। ওয়াসা আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের অনুসারী হওয়ায় আক্তারুজ্জামানের কিছুই হয়নি। বরং তাঁর অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির দলবাজি বেড়ে যায়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাসকিম ও তাঁর সময়ে নিয়োগ পাওয়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। তবে আজ পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার ডিএমডি আখতারুজ্জামান পদত্যাগ করেননি। গতকাল রোববার কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ওয়াসার হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিলো আকতারুজ্জাম এখনো দুর্নীতিবাজ পলায়নকারি সাবেক এমডি তাসকিনের সাথে পরামর্শ করে ওয়াসায় অবৈধ প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।আওয়ামীলীগ-যুবলীগ পরিচয়ে যে সকল প্রকৌশলী বিভিন্ন প্রকল্পে এবং বিভিন্ন জোনে ডিসিআরও,এআরও,রাজস্ব কর্মকর্তা,সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা,বিলিং সহকারী দায়িত্বে আছেন তাঁদেরকে আকতারুজ্জামান তাকসিমের পরামর্শে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমালোচিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রশাসনিক দায়িত্বে রেখে বদলি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগকৃতরা বিভিন্ন জোন থেকে কর্মকাণ্ড স্থবীরতা করে সরকারি রাজস্ব পুরনের লক্ষমাত্রা অর্জনে ষড়যন্ত্র করতে পারে বলে কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন। উল্লেখ্য গত কয়েকদিন পূর্বে ট্রেনিং সেন্টারে কর্মচারীদের ক্লাস নেয়ার সময় পর পর দুই দিন ডিএমডি আখতারুজ্জামান আওয়ামীলীগ সরকারের প্রশংসা ও দুর্নীতিবাজ সাবেক এমডিএম এর গুনো গান করেছেন এমনকি ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে ড,ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সে বিশৃঙ্খল সরকার বলে উল্লেখ করেন।এ সময় কয়েকজন কর্মচারী তার এসব বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। এরই সূত্র ধরে গতকাল রোববার ওয়াসা ভবনে কয়েক হাজার কর্মচারী জড়ো হয়ে তাকে ওয়াসা ভবন থেকে বের করে দেয়। এই সময় ঢাকা ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান খান, ঢাকা ওয়াসা জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম খান এবং সাধারন সম্পাদক মনির হোসেন পাটোয়ারী সংবাদ পেয়ে দ্রুত ওখানে গিয়ে কর্মচারীদের সাথে কথা বলে পরিস্থতি শান্ত করেন। প্রশাসনিক দায়িত্বে আখতারুজ্জামান থাকলে বঞ্চিত এবং দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে কর্মচারীরা আশংকা করছেন।তিন বছর পর পর বিভিন্ন পদে যেমন রাজস্ব পরিদর্শক, সহকারী রাজস্ব পরিদর্শক, বিলিং সহকারী এবং আউট সোর্সিং এর পদে বদলী করার নিয়ম থাকলেও ডিএমডি আখতারুজ্জামান তাঁর দূর্নীতিপরায়ন বাহিনীদের এখনো সব জায়গায় বহাল তবিয়তে রেখেছেন বলে ওয়াসার কর্মচারীরা অভিযোগ করেন।তাঁরা বলেন,দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মচারীদের বদলী,পদন্নোতি সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে আসছে ডিএমডি আকতারুজ্জামান।ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়,
আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে অবৈধভাবে সুবিধা নেয়া আওয়ামী অনুসারী তাকসিম সিন্ডিকেটের প্রকল্প পরিচালক,নির্বাহী প্রকৌশলী,ডিসিআরও,রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা,বিলিং সহকারী এবং আউটসোর্সিং পদে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা – কর্মচারীদের দ্রুত সরানো না হলে যে কোন সময় ওয়াসা ভবনে অপ্রতিকর ঘটনা ঘটতে পারে যার দায় ভার ঢাকা ওয়াসার প্রশাসনকে নিতে হবে বলে সুত্র জানায়।