মেহেদী হাসান নাদিমের সাজানো নাটকে ময়মনসিংহ পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে। অস্ত্র ও মাদক মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে আদালতের নির্দেশে জব্দকৃত গাড়ি বুঝে নেওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর নিজেই জানায় তার গাড়িতে অস্ত্র আছে। অস্ত্রটি হলো একটি নতুন পিস্তল, যা ছিল পুলিশকে বিতর্কের মুখে ফেলতে তারই সাজানো নাটক। ফের আসামি হতে পারেন নাদিম ও তার সহযোগীদের কেউ কেউ।
মেহেদী হাসান নাদিম আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সাংবাদিকসহ ১২/১৪ জনকে নিয়ে ১৬ এপ্রিল রাত পৌনে দশটায় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় যান। পরে মামলার তদন্তকারী অফিসারের কাছ থেকে গাড়িটি বুঝে নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় তারা ১০/১২ জন দফায় দফায় কানাঘুষা করে ও গাড়ির দরজা-জানালা খোলাখুলির পর হঠাৎ একটি ঝকঝকে পিস্তল সিটের নিচে দেখা মেলে। সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নাদিম ও হলুদ রঙের গেঞ্জি পরিহিত এক ব্যক্তি একাধিকবার গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ববর্তী মামলা থেকে নাদিমকে রেহাই দিতে তার নেতৃত্বে একটি চক্র এই নাটক সৃষ্টি করে। পুলিশ তাৎক্ষণিক অস্ত্রটি জব্দ করে এবং সন্দেহভাজনদের আটক করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সটকে পড়েন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অস্ত্রটি জব্দ করে আইনি প্রক্রিয়ায় তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মেহেদী হাসান নাদিমের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে ৭টি মামলা রয়েছে।
ময়মনসিংহে ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে পৃথক দুটি মামলা হয়। অস্ত্র মামলায় নাদিম ও আবুল কালামকে আসামি করা হয়। নগরীর মাসকান্দা এলাকার বিসিক শিল্পনগরীতে নাদিমের বাসায় অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এ সময় তার বাসা থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদক, একটি মোবাইল ও প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
এর আগে, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি মেহেদী হাসান নাদিম ও তার দুই সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তার বাসা থেকে পিস্তল, গুলি এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ও অস্ত্র আইনে অর্ধডজনেরও বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করে যাচাই-বাছাই চলছে। এছাড়া অস্ত্রের সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই মাদক ব্যবসায়ী নাদিমের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তারকৃত নাদিমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা দুটি এসআই আনোয়ার হোসেন তদন্ত করছেন। মূলত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিতর্কিত এবং কৌশলে ফাঁসিয়ে ময়মনসিংহ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও বেকায়দায় ফেলতে নাদিমসহ চক্রটি এই নাটক সাজিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারা জানে না পুরো থানা এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। কারা কিভাবে এই নাটক তৈরি করেছে তা সিসিটিভির ফুটেজেই প্রমাণিত হবে। এ ঘটনায় এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. সোরওয়ার্দী বিষয়টি তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। অতি দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।