গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন করে সংঘর্ষের দিকে মোড় নিতে পারে। ইসরায়েল ইতিমধ্যে রিজার্ভ সেনা প্রস্তুত করেছে এবং যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, যদি হামাস আগামী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে তারা গাজায় আবার হামলা শুরু করবে। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, যে কোনো মুহূর্তে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়েছে। খাবার, পানির সংকট তো রয়েছেই, আশ্রয়কেন্দ্রেরও অভাব। এমন পরিস্থিতিতে যদি আবার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে গাজার বাসিন্দাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে।
হামাসের কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, আগামী শনিবার জিম্মি মুক্তির কথা, তবে পরে তিনি ঘোষণা করেন যে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত মুক্তি স্থগিত রাখা হচ্ছে। হামাসের দাবি, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে এবং গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি এবং ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, “শনি দিন দুপুরের মধ্যে হামাস যদি সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তবে গাজায় ‘নরক নেমে আসবে’।” ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “যদি হামাস চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে আমরা ‘তীব্র লড়াই’ শুরু করব।”
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবেদল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ গাজার ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাকে একেবারে অস্বীকার করেছেন। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব নয়। চীনও এই পরিকল্পনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে এবং জানায়, গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি জানান, গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ২০ লাখের বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে গেলেও, ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তে অটল আছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, জর্ডান এবং মিশর যদি তার পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তাহলে তিনি ওই দেশগুলোর জন্য সহায়তা বন্ধ করে দেবেন।
ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি মিশরে আরব দেশগুলোর জরুরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্মেলন ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সমর্থন সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ ট্রাম্পের প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।