মাগুরা সদর উপজেলায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বড় বোনের শ্বশুর ও ভাশুরসহ চার জনের ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার (০৯ মার্চ) ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভুক্তভোগী শিশুটির শারীরিক অবস্থা পরিদর্শন করে কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ঘটনাটি গত ৫ মার্চ রাতে মাগুরা পৌর এলাকার নান্দুয়ালী বসতের এক বাড়িতে ঘটে। মামলার এজাহার ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০) তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালানোর সময় মুখ চেপে ধরে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে শিশুটি অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকলে তাকে বড় বোনের কক্ষে ফেলে রাখা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে মাগুরা জেনারেল হাসপাতাল, পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। শনিবার শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে রেখে সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়।
শনিবার সকালে শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে বড় বোনের স্বামী সজিব, শ্বশুর হিটু শেখ, শাশুড়ি ও ভাশুরের নাম উঠেছে। এদের মধ্যে শ্বশুর হিটু শেখ ও ভাশুর আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শিশুটির বড় বোনের বিয়ের পর থেকেই তার শ্বশুর তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। গত ১ মার্চ শিশুটিকে বেড়াতে পাঠানো হলে ৫ মার্চ রাতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সিএমএইচ-এ শিশুটির অবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। নারীরা যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেন, সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। এই মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব থাকতে দেওয়া হবে না।” তিনি আরও জানান, অভিযুক্তরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়, সে বিষয়ে নজরদারি চলছে।
ঘটনার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে জানা গেছে, শিশুটির বড় বোন গত ২০ দিন আগে তার শ্বশুরের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। পরে পরিবারের চাপে শিশুটিকে সঙ্গে করে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয়। ৫ মার্চ রাতের ঘটনার পর শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে শাশুড়ি পালিয়ে যান। বড় বোনের স্বামী ও ভাশুর তাকে ঘটনা গোপন করতে হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাবা দিনমজুর ও মা গৃহিণী। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এ ঘটনায় মাগুরায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নারী নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর মেডিকেল রিপোর্ট ও অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করে দ্রুত তদন্ত শেষ করা হবে।