আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে এলজিইডি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ আত্মনির্ভরশীল ১০ জন নারীকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
শনিবার (০৮ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ে এলজিইডির সদর দপ্তরে প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী হলে এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, “অনেকেই ধর্মের আবেগকে ব্যবহার করে নানাভাবে নারীদেরকে হেনস্থা করার ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটিয়েছে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, আমাদের ধর্ম এই ধরনের কার্যক্রমকে সমর্থন করে না। আমাদের ধর্মে নারীদেরকে সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় স্বীকৃতি দিয়েছে। যারা এই ধরনের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছে কিংবা হচ্ছে তাদেরকে আমরা সতর্ক করে দিতে চাই, সরকার এই বিষয়ে কোনো প্রকার ছাড় দিবে না।”
তিনি বলেন, “নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার যেকোন মহল থেকে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষনের মতো যেসব ঘটনাগুলো ঘটছে তা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের দিক নির্দেশ করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে বিচার নিশ্চিতে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে। আমরা এমন ধরনের রাষ্ট্র চাই যেখানে নারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য থাকবে না। নারী-পুরুষ সকলে নতুন বাংলাদেশে নতুন এজেন্ডায় কাজ করে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানী খাতে সবচেয়ে বেশি অবদান নারীদের। এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে নারীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করার সাহস ও সুযোগ দেওয়ার জন্য এলজিইডিকে ধন্যবাদ জানাই। আগামী সময়ে এলজিইডির সকল কার্যক্রম প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের সুযোগ করে দেওয়া এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করার অনুরোধ করছি।”
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্থানীয় সরকার সচিব মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, “দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে যাচ্ছে এলজিইডি। একই সাথে পুঁজি সরবরাহের মাধ্যমে নারীদের নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আব্দুর রশীদ মিয়া বলেন, “জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা রইলো। একটি সুখী পরিবার গঠনে যেমন একজন নারীর অবদান আছে, তেমনি একটি রাষ্ট্র গঠনেও সমানভাবে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য।”

তিনি বলেন, “১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর ১৯৮৫ সালে এলজিইডি গ্রামীণ দুস্থ নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। বিগত প্রায় ৪ দশকে নারী উন্নয়নে গৃহীত এলজিইডির কার্যক্রম সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত ভীত রচনা করেছে। এলজিইডি জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন, এলজিইডির বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ আত্মনির্ভরশীল নারী নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের সম্মাননা দিয়ে থাকে এলজিইডির জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরাম।”
তিনি আরও বলেন, “এলজিইডির জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরামের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৪৭ জন শ্রেষ্ঠ আত্মনির্ভরশীল নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ১০ জন নারী পেয়েছেন এলজিইডির শ্রেষ্ঠ আত্মনির্ভরশীল নারী সম্মাননা। প্রেরণার অভিযাত্রী এসব নারী অন্য নারীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, এলজিইডি জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অতিঃপ্রধান প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন এবং মূল প্রতিপাদ্যের উপর উপস্থাপনা করেন নির্বাহী প্রকৌশলী সালমা শহীদ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) একেএম তারিকুল আলম, উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. আবুল হাসান (উপ-সচিব) এবং এলিজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।