ঢাকা ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কর্মস্থল ত্যাগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: আব্দুর রশীদ মিয়া ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল বোয়ালখালী শাকপুরা প্রবর্ত্তক পাইলট কন্যা বিদ্যাপীঠের এডহক কমিটির সভাপতি হলেন পেয়ার মোহাম্মদ কুশুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত মণিপুরী ললিতকলায় ৭ দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন জয়পুরহাটে ছাত্রদল নেতা ছুরিকাঘাতে জখম শিবগঞ্জে ২ ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা, দেড় লাখ টাকা অর্থদন্ড নীলফামারীতে ১৫ মার্চ ৩ লাখ শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল বাংলাদেশে খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কখনো ফিরে আসার সুযোগ নেই: আমানউল্লাহ আমান শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পাঁচ সফল প্রতিবন্ধী নারীকে সম্মাননা প্রদান রাজশাহীতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার রায়পুরে জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নারীসহ আহত ৬

প্রকৃতিতে অস্তিত্ব সংকটে “মাকাল ফল”

“গুরুমশায় বলেন তারে/‌বুদ্ধি যে নেই একেবারে/দ্বিতীয়ভাগ করতে সারা ছ’মাস ধরে নাকাল।’ রেগেমেগে বলেন, ‘বাঁদর, নাম দিনু তোর মাকাল।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই শিশুতোষ ‘মাকাল’ নামক কবিতায় অনুন্নত বালকটি পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। উপমা থেকে নামকরণ হয়েছে এ ফলটির। মাকালের আদি নাম ছিল ‘মহাকাল’। এ নামটি ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়ে উপমাশ্রিত নামে রূপান্তরিত হয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Trichosanthes tricuspidata।

টকটকা লাল ফল মাকাল। উদ্ভিদটি ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন হলেও বিপন্ন প্রকৃতিতে তার অস্তিত্ব আরও সংকটে।প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ লতানো উদ্ভিদটি। পাঠ্যপুস্তকে মাকাল ফলের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা অচেনা মাকাল ফল।

দেখতে আপেলের মতো এই মাকাল ফলটি। ভেতরে কালো ও তিতা। কাকে খায় বলে এটি কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় অনেকেই কাওয়াজাঙ্গি/কাওয়াকাডি/কাওয়াজিঙ্গা বলেও ডেকে থাকে। এক সময় এই জেলায় মাকালের বিষ ব্যাপকহারে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ে এই ফলটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

মাকাল গাছ মূলত লতাজাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। মাকাল ফলের গাছ জঙ্গল বা বাড়ির বড় বড় গাছকে আশ্রয় করে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। একটি পরিপূর্ণ মাকাল ফলের গাছ লম্বায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার কক্ষে ফুটে সাদা রঙের ফুল। মাকাল ফল দেখতে অনেকটা ডিমের মতো। মাকাল ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ, কিছুদিন পর হলুদ ও ফলটি পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। বর্ষাকালে সাধারণত মাকাল ফলের ফুল ও ফল হয়।

মাকাল ফল ও গাছের বেশ কিছু ভেষজ গুণও আছে। মাকাল গাছের শিকড় কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কফ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মাকাল কাজে লাগে। নাক ও কানের ক্ষত উপশমে মাকাল গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জন্ডিস নিরাময়, দেহে কোনো কারণে পানি জমলে অর্থাৎ শ্লোথ রোগে দেহ থেকে পানি দূর করতে, স্তনের প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা, বাত-ব্যথা, কাশি, পেট বড় হয়ে যাওয়া এবং শিশুদের অ্যাজমা নিরাময়ে মাকাল গাছের ফল-মূল-কান্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

মাকাল ফলের বীজের তেল সাপের কামড়, বিছার কামড়, পেটের সমস্যা (আমাশয়, ডায়রিয়া), মৃগীরোগ এবং সাবান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়। এছাড়া মাকাল ফলের বীজের তেল চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর। মাকাল ফলের বীচি ও আঁশ শুকিয়ে গুড়ো করে পানিতে দ্রবীভূত করে ফসলে প্রয়োগ করা যায়। এই দ্রবণ ফসলের পোকামাকড়, ইঁদুর ও রোগ-বালাই দমনে বিষ হিসেবে কাজ করে। আবহমানকাল ধরে কিশোরগঞ্জের কৃষকরা মাকালের বিষ দিয়ে ফসল রক্ষা করেছেন। এর বিষ ফসলের জন্য ক্ষতিকর নয়।

মাকাল ফলের গাছ প্রাকৃতিকভাবে বন-জঙ্গলে ও পরিত্যক্ত জায়গায় জন্মায়। বাংলাদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ জেলার জঙ্গলে এই গাছ অধিক পরিমাণে দেখা যায়। তবে গত একযুগ আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে মাকাল ফলের গাছ দেখা যেত, এক যুগের ব্যবধানে তা হ্রাস পেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ১০ ভাগের এক ভাগে। এ অবস্থা চলমান থাকলে আগামী দশকে এদেশ থেকে মাকাল ফল চিরতরে হারিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, নানা কারণে প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ায় এটি হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের কীটনাশকের প্রভাবে পরিবেশবান্ধব মাকালের বিষ আর কেউ কিনতে চায় না। বাজারেও পাওয়া যায় না।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কর্মস্থল ত্যাগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: আব্দুর রশীদ মিয়া

Verified by MonsterInsights

প্রকৃতিতে অস্তিত্ব সংকটে “মাকাল ফল”

আপডেট সময় ০৭:০২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

“গুরুমশায় বলেন তারে/‌বুদ্ধি যে নেই একেবারে/দ্বিতীয়ভাগ করতে সারা ছ’মাস ধরে নাকাল।’ রেগেমেগে বলেন, ‘বাঁদর, নাম দিনু তোর মাকাল।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই শিশুতোষ ‘মাকাল’ নামক কবিতায় অনুন্নত বালকটি পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। উপমা থেকে নামকরণ হয়েছে এ ফলটির। মাকালের আদি নাম ছিল ‘মহাকাল’। এ নামটি ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়ে উপমাশ্রিত নামে রূপান্তরিত হয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Trichosanthes tricuspidata।

টকটকা লাল ফল মাকাল। উদ্ভিদটি ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন হলেও বিপন্ন প্রকৃতিতে তার অস্তিত্ব আরও সংকটে।প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ লতানো উদ্ভিদটি। পাঠ্যপুস্তকে মাকাল ফলের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা অচেনা মাকাল ফল।

দেখতে আপেলের মতো এই মাকাল ফলটি। ভেতরে কালো ও তিতা। কাকে খায় বলে এটি কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় অনেকেই কাওয়াজাঙ্গি/কাওয়াকাডি/কাওয়াজিঙ্গা বলেও ডেকে থাকে। এক সময় এই জেলায় মাকালের বিষ ব্যাপকহারে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ে এই ফলটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

মাকাল গাছ মূলত লতাজাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। মাকাল ফলের গাছ জঙ্গল বা বাড়ির বড় বড় গাছকে আশ্রয় করে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। একটি পরিপূর্ণ মাকাল ফলের গাছ লম্বায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার কক্ষে ফুটে সাদা রঙের ফুল। মাকাল ফল দেখতে অনেকটা ডিমের মতো। মাকাল ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ, কিছুদিন পর হলুদ ও ফলটি পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। বর্ষাকালে সাধারণত মাকাল ফলের ফুল ও ফল হয়।

মাকাল ফল ও গাছের বেশ কিছু ভেষজ গুণও আছে। মাকাল গাছের শিকড় কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কফ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মাকাল কাজে লাগে। নাক ও কানের ক্ষত উপশমে মাকাল গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জন্ডিস নিরাময়, দেহে কোনো কারণে পানি জমলে অর্থাৎ শ্লোথ রোগে দেহ থেকে পানি দূর করতে, স্তনের প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা, বাত-ব্যথা, কাশি, পেট বড় হয়ে যাওয়া এবং শিশুদের অ্যাজমা নিরাময়ে মাকাল গাছের ফল-মূল-কান্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

মাকাল ফলের বীজের তেল সাপের কামড়, বিছার কামড়, পেটের সমস্যা (আমাশয়, ডায়রিয়া), মৃগীরোগ এবং সাবান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়। এছাড়া মাকাল ফলের বীজের তেল চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর। মাকাল ফলের বীচি ও আঁশ শুকিয়ে গুড়ো করে পানিতে দ্রবীভূত করে ফসলে প্রয়োগ করা যায়। এই দ্রবণ ফসলের পোকামাকড়, ইঁদুর ও রোগ-বালাই দমনে বিষ হিসেবে কাজ করে। আবহমানকাল ধরে কিশোরগঞ্জের কৃষকরা মাকালের বিষ দিয়ে ফসল রক্ষা করেছেন। এর বিষ ফসলের জন্য ক্ষতিকর নয়।

মাকাল ফলের গাছ প্রাকৃতিকভাবে বন-জঙ্গলে ও পরিত্যক্ত জায়গায় জন্মায়। বাংলাদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ জেলার জঙ্গলে এই গাছ অধিক পরিমাণে দেখা যায়। তবে গত একযুগ আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে মাকাল ফলের গাছ দেখা যেত, এক যুগের ব্যবধানে তা হ্রাস পেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ১০ ভাগের এক ভাগে। এ অবস্থা চলমান থাকলে আগামী দশকে এদেশ থেকে মাকাল ফল চিরতরে হারিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, নানা কারণে প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ায় এটি হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের কীটনাশকের প্রভাবে পরিবেশবান্ধব মাকালের বিষ আর কেউ কিনতে চায় না। বাজারেও পাওয়া যায় না।