ঢাকা ০৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার ৩৫ কেজি বাঘাইড় মাছ ও ১৫ কেজি মিষ্টিতে পোড়াদহ মেলা আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনা রেলওয়ে সেতুতে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি মহাপরিদর্শক পল মার্টিন বরখাস্ত শেখ হাসিনার বক্তব্য ভারতের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করেছে: শশী থারুর বিনামূল্যে ক্যান্সার ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আগামী অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যা মামলার রায়: আসিফ নজরুল পরিবেশ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সহকারী পরিচালক বদরুন্নাহার সীমার সীমাহীন দুর্নীতি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প: পিডি উজ্জ্বল মল্লিক ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্লট হাতিয়ে নিয়েছে ময়মনসিংহে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ময়মনসিংহ জেলা মটরযান কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি সম্পাদকসহ সকলের শপদ ও দায়িত্ব গ্রহণ

মৌলভীবাজারে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও বাইক্কা বিলে পাখি কম

শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে মৌলভীবাজারের এ বছর অভয়াশ্রমে বাইক্কা বিলে পাখির কম থাকলেও মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেমে নেই দর্শনার্থী ও পাখিপ্রেমীদের ভিড়।

গত বছর যে পরিমান পাখি ছিল, এ বছর সে তুলনায় পাখি কম। অতিথি পাখি এখানে যতটুকু আসার কথা ছিল এখানে তা মিলেনি। পাখিদের থাকার ব্যবস্থা, খাওয়ার সুব্যবস্থা এখানে নেই বা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই, পাখি হুমকির মুখে আছে। পাখি শিকারী যারা আছে তারা পাখি মারার কারণে পাখি অনেক কমেছে। বিল জুড়ে শুধুই সাদা পানি আর পানি। এদিকে বিলের আকর্ষণ পদ্ম এখন আর খুঁজে পাচ্ছে না পর্যটকরা। এই অভয়ারণ্যটা সেরকম আছে বলে দর্শনার্থীরা মনে হয় না। পরিবেশের যদি আরো পরিচর্যা বা মনিটরিং বাড়ানো যেতো, রক্ষণাবেক্ষণ যদি আরো ভালো করে হতো, আরো একটু দায়িত্বশীলভাবে যদি কাজ করা হতো তাহলে ভালো হতো।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। শীত শেষে মার্চে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে, যা জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শীত শেষে মার্চে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে।

২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়, বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের বংশ রক্ষার্থে হাইল হাওরের তিনটি বিলের সমন্বয়ে ১০০ হেক্টর আয়তনের জলাভূমিকে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রমকে হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য ফিরে পাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুরু থেকে সরকার বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে।

বাইক্কা বিল ঘুরে দেখা যায়, এ মৌসুমে বেগুনি কালেম, নতুন আসা শাঁমুক ভাঙ্গা, কালকৌট, লেঞ্জা, বালি হাঁস ও দেশিয় প্রজাতির কিছু সংখ্যক পাখির উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।

বাইক্কা বিলের একজন দর্শনার্থীর জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাইক্কা বিলে পরিবারের সাথে ঘুরতে এসেছি, এখানে আগে কখনো আসা হয়নি, এই প্রথম আসা। এই উদ্দেশ্যে এসেছিলাম যে পাখিদের অভয়ারণ্য থাকে এখানে। কিন্তু এখানে এসে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা অনেক কম। পানিতে এসব না থাকলে পাখিরা পানিতে বসে না।

আরো একজন দর্শনার্থী সুমি আক্তার দিনাজপুর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভিডিওতে বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য দেখে এখানে এসেছি। ভিডিওতে দেখেছিলাম অনেক পাখি ছিল। কিন্তু বাস্তবে এসে দেখলাম পাখি অনেক কমে। এদের আরো যত্নের দরকার। প্যাটেনাইজ করলে হয়তো আরো ভালো হবে। ট্যুরিস্টরা আসল আনন্দ পাবে।

দর্শনার্থীরা জানান, অভয়াশ্রম এটা অনেক বড় বিষয়। পাখিরা এসে যখন নিরাপদ অনুভব করবে তখনই আসবে। এখানে পাখিদের আসার জন্য যদি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায়, তাহলে অবশ্যই পাখিরা আসবে। বাইক্কা ঘুরে মনোরন দৃশ্য দেখে তাদের মধ্যে প্রশান্তি ফিরে পাবে। ওরা বুঝবে যে ওদেরকে কেউ ধরে নিয়ে গেল, তাদের নিরাপত্তা নাই। অন্তরে তো সবারই ভয়ভীতি কাজ করে। ওরা তো পাখি, ওরাও ভয় পায় যে ওদেরকে কেউ ধরে নিয়ে যায় কিনা।

বাইক্কা বিল বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মিন্নত আলী বলেন, বাইক্কা বিলে এ বছর তুলনামূলক পাখি কম তার প্রধান কারণ হল বাইক্কা বিলে শাপলা, শালুক, কচুরিপানা কম। বাইক্কা বিলে শাপলা, শালুক, কচুরিপানা এসব কম থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় অতিথি পাখি কম। যদি শাপলা শালুক কচুরিপানা বেশি থাকতো, তাহলে পাখি বেশি থাকার সম্ভাবনা ছিল। আমার মনে হয় বাইক্কা বিলে যদি গাছগাছালি বেশি লাগানো যায় তাহলে পাখির সংখ্যা বাড়তে পারে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিভাগ সিলেট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে পরিযায়ী পাখিগুলো কাছাকাছি নাই কিন্তু ভিতরের দিকে আমরা দেখেছি যে প্রচুর পরিমাণে পাখি আসছে। প্রতিদিন পাখিগুলো এখানে দেখা যাচ্ছে না কারণ এখানে গতবার প্রচুর পরিমাণে পদ্ম ছিল, এ বছর সেই পদ্ম নাই। এই পদ্ম না থাকার একটা কারণ হচ্ছে যে এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে অতিরিক্ত বন্যা হয়ে এখানে প্রচুর কচুরিপানা আসছে। এই কচুরিপানাগুলো পদ্মের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ হচ্ছে, পর্যটকরা এখানে এসে পাখিদের অনেক বিরক্ত করে। পাখিরা যদি ভয় ভীতি পায় তাহলে কাছাকাছি আসবে না। এসবে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান আছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

Verified by MonsterInsights

মৌলভীবাজারে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও বাইক্কা বিলে পাখি কম

আপডেট সময় ০৩:৩৯:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে মৌলভীবাজারের এ বছর অভয়াশ্রমে বাইক্কা বিলে পাখির কম থাকলেও মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেমে নেই দর্শনার্থী ও পাখিপ্রেমীদের ভিড়।

গত বছর যে পরিমান পাখি ছিল, এ বছর সে তুলনায় পাখি কম। অতিথি পাখি এখানে যতটুকু আসার কথা ছিল এখানে তা মিলেনি। পাখিদের থাকার ব্যবস্থা, খাওয়ার সুব্যবস্থা এখানে নেই বা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই, পাখি হুমকির মুখে আছে। পাখি শিকারী যারা আছে তারা পাখি মারার কারণে পাখি অনেক কমেছে। বিল জুড়ে শুধুই সাদা পানি আর পানি। এদিকে বিলের আকর্ষণ পদ্ম এখন আর খুঁজে পাচ্ছে না পর্যটকরা। এই অভয়ারণ্যটা সেরকম আছে বলে দর্শনার্থীরা মনে হয় না। পরিবেশের যদি আরো পরিচর্যা বা মনিটরিং বাড়ানো যেতো, রক্ষণাবেক্ষণ যদি আরো ভালো করে হতো, আরো একটু দায়িত্বশীলভাবে যদি কাজ করা হতো তাহলে ভালো হতো।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। শীত শেষে মার্চে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে, যা জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শীত শেষে মার্চে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন এসব পাখি আবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে।

২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়, বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের বংশ রক্ষার্থে হাইল হাওরের তিনটি বিলের সমন্বয়ে ১০০ হেক্টর আয়তনের জলাভূমিকে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রমকে হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য ফিরে পাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুরু থেকে সরকার বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে।

বাইক্কা বিল ঘুরে দেখা যায়, এ মৌসুমে বেগুনি কালেম, নতুন আসা শাঁমুক ভাঙ্গা, কালকৌট, লেঞ্জা, বালি হাঁস ও দেশিয় প্রজাতির কিছু সংখ্যক পাখির উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।

বাইক্কা বিলের একজন দর্শনার্থীর জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাইক্কা বিলে পরিবারের সাথে ঘুরতে এসেছি, এখানে আগে কখনো আসা হয়নি, এই প্রথম আসা। এই উদ্দেশ্যে এসেছিলাম যে পাখিদের অভয়ারণ্য থাকে এখানে। কিন্তু এখানে এসে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা অনেক কম। পানিতে এসব না থাকলে পাখিরা পানিতে বসে না।

আরো একজন দর্শনার্থী সুমি আক্তার দিনাজপুর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভিডিওতে বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য দেখে এখানে এসেছি। ভিডিওতে দেখেছিলাম অনেক পাখি ছিল। কিন্তু বাস্তবে এসে দেখলাম পাখি অনেক কমে। এদের আরো যত্নের দরকার। প্যাটেনাইজ করলে হয়তো আরো ভালো হবে। ট্যুরিস্টরা আসল আনন্দ পাবে।

দর্শনার্থীরা জানান, অভয়াশ্রম এটা অনেক বড় বিষয়। পাখিরা এসে যখন নিরাপদ অনুভব করবে তখনই আসবে। এখানে পাখিদের আসার জন্য যদি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায়, তাহলে অবশ্যই পাখিরা আসবে। বাইক্কা ঘুরে মনোরন দৃশ্য দেখে তাদের মধ্যে প্রশান্তি ফিরে পাবে। ওরা বুঝবে যে ওদেরকে কেউ ধরে নিয়ে গেল, তাদের নিরাপত্তা নাই। অন্তরে তো সবারই ভয়ভীতি কাজ করে। ওরা তো পাখি, ওরাও ভয় পায় যে ওদেরকে কেউ ধরে নিয়ে যায় কিনা।

বাইক্কা বিল বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মিন্নত আলী বলেন, বাইক্কা বিলে এ বছর তুলনামূলক পাখি কম তার প্রধান কারণ হল বাইক্কা বিলে শাপলা, শালুক, কচুরিপানা কম। বাইক্কা বিলে শাপলা, শালুক, কচুরিপানা এসব কম থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় অতিথি পাখি কম। যদি শাপলা শালুক কচুরিপানা বেশি থাকতো, তাহলে পাখি বেশি থাকার সম্ভাবনা ছিল। আমার মনে হয় বাইক্কা বিলে যদি গাছগাছালি বেশি লাগানো যায় তাহলে পাখির সংখ্যা বাড়তে পারে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিভাগ সিলেট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে পরিযায়ী পাখিগুলো কাছাকাছি নাই কিন্তু ভিতরের দিকে আমরা দেখেছি যে প্রচুর পরিমাণে পাখি আসছে। প্রতিদিন পাখিগুলো এখানে দেখা যাচ্ছে না কারণ এখানে গতবার প্রচুর পরিমাণে পদ্ম ছিল, এ বছর সেই পদ্ম নাই। এই পদ্ম না থাকার একটা কারণ হচ্ছে যে এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে অতিরিক্ত বন্যা হয়ে এখানে প্রচুর কচুরিপানা আসছে। এই কচুরিপানাগুলো পদ্মের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ হচ্ছে, পর্যটকরা এখানে এসে পাখিদের অনেক বিরক্ত করে। পাখিরা যদি ভয় ভীতি পায় তাহলে কাছাকাছি আসবে না। এসবে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান আছে।