মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াই ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। বর্তমানে ৫০টিরও বেশি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লড়াই করছে, যার মধ্যে আরাকান আর্মি একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী। তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ব্যাপক অংশ দখল করেছে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে লড়াই করছে। তবে, নতুন একটি রাষ্ট্র গঠন কি সম্ভব? কীভাবে এর বাস্তবায়ন হতে পারে?
রাখাইন রাজ্য মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এবং এই অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাস মজুত রয়েছে। চীন রাখাইন রাজ্যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায়। চীনের জন্য রাখাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকা, যা ভারত মহাসাগরে তাদের প্রবেশপথ সহজ করবে। এই কারণেই চীন রাখাইন রাজ্যকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একতা নেই। কিছু গোষ্ঠী যেমন আরাকান আর্মি, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে কিছু গোষ্ঠী কেবল স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করছে। এই বিভাজন বিদ্রোহী আন্দোলনকে দুর্বল করে তুলছে। তবে, চীনের কূটনৈতিক তৎপরতা মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। চীন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে।
চীন মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের লক্ষ্য মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সুবিধা অর্জন করা। তারা মিয়ানমারে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চায়। তবে, চীনের ভূমিকা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার আরাকান আর্মির অস্তিত্বকে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। চীন এবং ভারত উভয়েই জান্তা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবে তাদেরও রাখাইনে বিনিয়োগ রয়েছে। যদি রাখাইনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করা সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে একতা, অভ্যন্তরীণ সমঝোতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন। নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের পরাশক্তির দেশগুলো সমর্থন দিলে তা বাস্তবায়ন হতে পারে। তবে, এটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পরিস্থিতি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। কক্সবাজার সীমান্ত থেকে মাত্র কিছু কিলোমিটার দূরে আরাকান আর্মি একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করলে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতি নিতে হতে পারে। এর পাশাপাশি, রোহিঙ্গা সংকট এবং সীমান্ত সমস্যায় বাংলাদেশের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
চীন মিয়ানমারের শান্তির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা যদিও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে, তবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। চীনের সহায়তায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং জান্তা সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও, এটি যদি স্থায়ী না হয়, তবে পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খল হতে পারে।
মিয়ানমারে নতুন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা একাধিক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক শর্তের ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, তবে চীনের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়িত হওয়া কঠিন হতে পারে।