মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর, পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এই নতুন পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে, যেখানে দুই দেশ একে অপরকে বাণিজ্যিকভাবে চাপে রাখতে শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
চীন জানায়, তারা মার্কিন কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), ক্রুড অয়েল, কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক এবং বড় ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ওপর ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এই শুল্কগুলোর ফলে মার্কিন পণ্যের দাম চীনা বাজারে বাড়বে, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং মার্কিন শুল্ক নীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। চীন তাদের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মার্কিন পণ্যের প্রবাহ কমাতে চায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী। তার প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার উদ্দেশ্য চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানো এবং দেশীয় শিল্প রক্ষা করা। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধে চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং মার্কিন শুল্ক নীতির ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পৃথিবীজুড়ে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করবে।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এই বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পদ্ধতির কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া এবং নতুন অর্থনৈতিক সংকটের সূচনা হতে পারে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ ভোক্তা বাজার, তাই তাদের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এদিকে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশকে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই পরিস্থিতি অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, কারণ তাদেরও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব বিশাল হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী ফলস্বরূপ শুধু দুই দেশেরই নয়, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারও বিপর্যস্ত হতে পারে। সাপ্লাই চেইনে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।