২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রনেতা আবু সাঈদ। তার হত্যার পর দেশব্যাপী শুরু হয় গণঅভ্যুত্থান, যা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের পতনে পৌঁছায়। ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া এই অভ্যুত্থান সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসন ও সহিংস দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবের রূপ নেয়। ১ জুলাই শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। এতে প্রায় ৮৩৪ জন নিহত ও ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
এই আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং দলটি এখন গভীর সংকটে। আওয়ামী লীগে তীব্র অভ্যন্তরীণ বিভাজন দেখা দিয়েছে। একদিকে প্রবীণ নেতারা ক্ষমাশীল না হওয়ার পক্ষে, অন্যদিকে মধ্যম স্তরের নেতাকর্মীরা দলটিকে পুনর্গঠনের কথা বলছেন। তাদের মতে, দলটি ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে তার ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন হবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে, আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূল কর্মী নিজেদের অনিরাপত্তার মধ্যে আবদ্ধ অনুভব করছেন। অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপনে আছেন। কিছু কর্মী তাদের অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগ এখন আর জনগণের সংগঠন নেই, বরং শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তাদের অভিযোগ, ২০১৪ সালের পর থেকেই দলটি সুবিধাবাদী সাংসদদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে, যার ফলে দলের ভিতর থেকে এক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ এখনো নিজেদের শাসনকালীন অত্যাচারের জন্য কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেনি, বরং যুবলীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, দলের নেতারা এর জন্য ইসলামী ছাত্র শিবিরকে দায়ী করছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক অনুশীলনের অভাবে আওয়ামী লীগ একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা এখনও নিজেদের ভুলের জন্য কোনো ধরনের আত্মসমালোচনা বা অপরাধ স্বীকার করছেন না, যা তাদের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
তবে, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না এবং সেই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে।