আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের সনদ বাতিল, স্থায়ী বহিষ্কার, সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চারজনের সনদ বাতিল, তিনজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুইজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ও ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারীরা আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ এবং যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীবের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েক দফায় মারধর করেন।
ওই ঘটনায় সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে সভাপতি ও তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রায় বছরখানেক ধরে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়েছিল। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে শাস্তির আওতায় আসাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ফোকলোর বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে নাঈমকে স্থায়ী বহিষ্কার, সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক এবং আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জয় মোড়লকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তার স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে এবং ছাত্রলীগ নেতা লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ তুহিনকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তার স্নাতকের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক উপ দপ্তর সম্পাদক ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লোবন মোখলেস ও ছাত্রলীগ কর্মী ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির।
বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মী রিজওয়ানুল করিম রাব্বি (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আবু রায়হান (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ও সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছরের জন্য এবং কেএইচ গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ,২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন- বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেল (টিপিএস বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ), সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ (নৃবিজ্ঞান বিভাগ,২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), নাঈমুল ইসলাম অনিক (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ), পবিত্র ম-ল (পপুলেশন সায়েন্স, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) এবং আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ার (চারুকলা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ)।
ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুল্লাহ (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ ও নয়ন হাসানের (ইএসই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হামলা ও মারধরের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ফাহাদ বিন সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব।
আহসান হাবীব বলেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল বলেই প্রায় বছরখানেক ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়েছিল তদন্ত প্রতিবেদন। দীর্ঘসময় পর হলেও শাস্তির আওতায় এলো অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় ফোনেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০ জানুয়ারি তার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ সংরক্ষিত।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।