একাত্তরের রণাঙ্গনের অকুতোভয় যোদ্ধা মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী (কমল সিদ্দিকী) বীর উত্তম মৃত্যুবরণ করেছেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর ২৪) প্রথম প্রহরে, ১২টা ৮ মিনিটে ঢাকার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তাঁর বড় ভাই মেজর জেনারেল(অবঃ) এম মজিদ-উল-হক ছিলেন জিয়াউর রহমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী। কমল সিদ্দিকীর স্ত্রীর নাম সৈয়দা রোকেয়া সিদ্দিকী। তাঁদের দুই মেয়ে রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী পরিচিত ছিলেন তাঁর ডাক নাম ‘কমল সিদ্দিকী’ নামে। যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে নড়াইল ভাটিয়াপাড়ায় শত্রুর সম্মুখ যুদ্ধে তাঁর ডান চোখে গুলি লাগে।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখেন ‘কমলের চোখ’ নামের কবিতা। তাঁর আরেক বিখ্যাত কবিতা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ সেখানেও এসেছে কবির বন্ধু কমলের চোখ হারানোর প্রসঙ্গ। কবি লেখেন, ‘উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের মত কমলের চোখের কথা বলছি‘।
নড়াইল সদর উপজেলার হবখালী গ্রামের জেড আহমেদ ও ওয়াজেদা আহমেদের ছেলে মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭১ সালে তার কর্মজীবন শুরু হয় তৎকালীন সময়ে ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (ওয়াপদা, পরে ভাগ হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নামে আলাদা দপ্তর হয়)। সেখানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। পরে ভারতে গিয়ে তিন মাস বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকেন। এরপর ফের সশস্ত্র যুদ্ধে যোগ দেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে যশোর, নড়াইল ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন কমল সিদ্দিকী।
৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব সেক্টরে রেইড, অ্যাম্বুশ ও গেরিলা যুদ্ধে তিনি বীরত্বের পরিচয় দেন। তাঁর যুদ্ধকৌশলে নড়াইলে নবগঙ্গার পাড়ের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে মুক্তিবাহিনী। ৭ ডিসেম্বর নড়াইল শহরে তিনিই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানিরা তখনও আত্মসমর্পণ করেনি। সেই সময়ে সেক্টর কমান্ডার আবুল মঞ্জুরের নির্দেশে ভাটিয়াপাড়াকে শত্রুমুক্ত করতে সেখানে যান বাংলার এই সূর্য সন্তান কমল সিদ্দিকী। ১৯ ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়ার যুদ্ধে তাঁর ডান চোখে গুলি লাগে। সেদিন যুদ্ধের পর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা।
পরে এক সাক্ষাৎকারে কমল সিদ্দিকী বলেছিলেন, “যুদ্ধ না করাটা অনেক নিরাপদ ছিল। কিন্তু আমি নিয়ত করে গেছি যুদ্ধ করব বলে।”
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকীকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয় বাংলাদেশ সরকার।
পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করেনি কোথায় কমল সিদ্দিকীর জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হবে।
এই মাত্র পাওয়াঃ
৭১-এর রণাঙ্গনে অকুতোভয় যোদ্ধা কমল সিদ্দিকী বীর উত্তম মৃত্যুবরণ করেছেন
- মাগুরা প্রতিনিধি
- আপডেট সময় ১০:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
- ১৪ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ