জুলাই বিপ্লবের দিনগুলিতে মাগুরায় ৬জন নিহত হয়। তার মধ্যে রাব্বির মৃত্যু অন্যতম। যার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জেলায় আন্দোলনের দানা বাঁধে। নিহত এবং আহতদের স্বজনদের ৮৭ দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারে কাটেনি শোক আর মানসিক বিপর্যয়ের ধাক্কা। সেই সাথে পরিবারের অন্য সদস্যরা ভুগছেন হতাশায়। এছাড়াও হতাশা এবং মানষিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্ত নানান শ্রেণী পেশার মানুষসহ শিক্ষার্থীরা। জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্তদের মানষিক বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে এখনই প্রয়োজন কাউন্সিলিং এমনটায় বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাব্বির পরিবারের মতো ক্ষতিগ্রস্তদের আশিভাগই শিক্ষার্থী। তাদের জেলে যেতে হয়েছে, শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়ে অঙ্গহানি হয়েছে, অনেকে চোখ হারিয়েছে। যাদের এখনও কাটেনি আতঙ্ক, ভুগছেন মানষিক বিষণ্ণতায়। জুলাই বিপ্লবে আহত এবং নিহত পরিবারের স্বজনদের মানষিক বিপর্যয় রোধে কাউন্সিলিং হতে পারে উত্তরণের পথ।
মানষিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮ সালের ৬০ নং আইনে বলা হয়েছে ৭(১) সরকার, মানষিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে যেকোন স্থানে মানষিক হাসপাতাল স্থাপন বা মেডিকের কলেজ হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালসমূহের পৃথক বিভাগ বা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে।
সরেজমিনে জুলাই বিপ্লবের ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, পৌরসভার বৈরনাতুল গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে নিহত মেহেদী হাসান রাব্বি (৩৪)। রাব্বির সন্তান অনাগত শিশু মাতৃগর্ভে বড় হচ্ছে পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায়। অথচ শিশুটির পিতা গত ৪ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিপক্ষের ছোড়া বুলেটের আঘাতে নিহত হন। রাব্বি যখন নিহত হন সেই সময়ে স্ত্রী রুমি খাতুনের গর্ভে ৪ মাস ২২ দিনের প্রথম সন্তান। যার বর্তমান বয়স ৮ মাস। গত তিন মাস অতিবাহিত হলেও স্বামী হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি রুমি। ফলে মানষিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও অবনতি হচ্ছে তার। সেই সাথে নিহতের মা সালেহা বেগম সন্তান হারানোর বেদনায় এখনও অনেকটাই বাকরুদ্ধ।
রাব্বির স্ত্রী রুমি খাতুন চোখের পানি ছেড়ে বলেন, “আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হচ্ছে স্বামী হারানোর শোক আর চোখের পানি। জানি না সন্তানের কি হবে। অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে রেখে যার স্বামী চলে যায়, শুধু সেই বোঝে কত কষ্টের।”
অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা নিশাত আহম্মেদ (১৭)। সে এসএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। ১৯ দিন জেলে থেকে ছাড়া পেলেও এখন মানষিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে দিন যাচ্ছে তার। একই সময়ে চলমান আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া শর্টগানের স্প্রিন্টারের আঘাতে আহত হয় কলেজ পাড়ার বাসিন্দা তিতাস পাটোয়ারী (১৮)। সে এসএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। স্প্রিন্টারের আঘাতে তার শরীরসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখ।
নিশাত আহম্মেদ বলেন, পুলিশের ছত্রভঙ্গের দৃশ্য আর গ্রেপ্তার এটা আমার জীবনে অনেক বড় একটা ধাক্কা। যে অত্যাচারের শিকার আমি হয়েছি সেটা কখনোই আমার স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। আমি এখনো রাস্তায় পুলিশ দেখলে আতঙ্কের মধ্যে থাকি। এখনো মনোযোগ দিতে পারিনি লেখাপড়ায়। বলতে পারেন আমি এবং আমার পরিবার এখনো মানষিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
তিতাস পাটোয়ারী বলেন, জুলাই বিপ্লবের উত্তাল দিনগুলোর কথা ভুলতে পারছি না। ঘুমটাও হয় না ঠিক মতো, সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকি।
জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্তদের মানষিক বিপর্যয় রোধে কি করণীয় এমনটা জানতে চাইলে মাগুরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান বাংলাদেশ সময়কে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে জুলাই বিপ্লবে আহত এবং নিহতদের স্বজনদের মানষিক হতাশা ও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সুযোগ রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে জাতীয় মানষিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের মানষিক স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপকদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের কাউন্সিলিং করানো বিশেষ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।