ঢাকা ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কর্মস্থল ত্যাগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: আব্দুর রশীদ মিয়া ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল বোয়ালখালী শাকপুরা প্রবর্ত্তক পাইলট কন্যা বিদ্যাপীঠের এডহক কমিটির সভাপতি হলেন পেয়ার মোহাম্মদ কুশুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত মণিপুরী ললিতকলায় ৭ দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন জয়পুরহাটে ছাত্রদল নেতা ছুরিকাঘাতে জখম শিবগঞ্জে ২ ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা, দেড় লাখ টাকা অর্থদন্ড নীলফামারীতে ১৫ মার্চ ৩ লাখ শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল বাংলাদেশে খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কখনো ফিরে আসার সুযোগ নেই: আমানউল্লাহ আমান শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পাঁচ সফল প্রতিবন্ধী নারীকে সম্মাননা প্রদান রাজশাহীতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার রায়পুরে জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নারীসহ আহত ৬

মৌলভীবাজারে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোয়াঁয় হারিয়ে যাচ্ছে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এ মৃৎশিল্প। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। আধুনিক সভ্যতায় বদলে যাচ্ছে পুরোনো দিনের অনেক কিছু। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। দিন যত যাচ্ছে তার সাথে বদলাচ্ছে মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতা, প্রকৃতি আরও নানাবিধ রং। কম চাহিদা, আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতি ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

শতবর্ষী মৃৎশিল্পের তৈরী হাড়ি-পাতিল, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, টালি, টাইলসসহ হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। তদুপরি তথাকথিত আধুনিকতার ছোয়ায় যান্ত্রিক জগতে দৈনিন্দন জীবনে ব্যবহার্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্পীরা।

একটি সময় ছিল যে, মৃৎশিল্প পেশার সাথে জড়িতরা মৃৎশিল্প দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতেন।তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনই ছিলো এ মৃৎশিল্প। আগে যেখানে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছিলো মাটির তৈরী তৈজসপত্রের ব্যবহার, সেখানে আজ প্লাষ্টিক, স্টিল, সিরামিক, ম্যালামাইন ও সিলবারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থে তৈরী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ব্যবহার।

শ্রীমঙ্গলে সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা জানান, কালের বিবর্তনে প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের তৈরী হাড়ি-পতিলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করেছে। এতে করে শ্রীমঙ্গলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃৎশিল্পিরা প্রচীন কাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণীভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাষ্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না।
তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার কোথাও এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পিরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পীরা জানান, দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তারা পরিবারে ফিরে পাবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পী বীণা পাল জানান, ২৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত আছেন। এর আগে বাপ-দাদারা করে গিয়েছেন। এর ঐতিহ্য ধারণ করে আজও তিনি এ মৃৎশিল্প পেশায় নিয়োজিত। তিনি জানান, এ পেশায় কাজ করে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখনও ছেলে মেয়েরা মাস্টার্স, অনার্সে লেখাপড়া করছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কর্মস্থল ত্যাগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: আব্দুর রশীদ মিয়া

Verified by MonsterInsights

মৌলভীবাজারে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোয়াঁয় হারিয়ে যাচ্ছে

আপডেট সময় ০৪:৫৪:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এ মৃৎশিল্প। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। আধুনিক সভ্যতায় বদলে যাচ্ছে পুরোনো দিনের অনেক কিছু। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। দিন যত যাচ্ছে তার সাথে বদলাচ্ছে মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতা, প্রকৃতি আরও নানাবিধ রং। কম চাহিদা, আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতি ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

শতবর্ষী মৃৎশিল্পের তৈরী হাড়ি-পাতিল, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, টালি, টাইলসসহ হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। তদুপরি তথাকথিত আধুনিকতার ছোয়ায় যান্ত্রিক জগতে দৈনিন্দন জীবনে ব্যবহার্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্পীরা।

একটি সময় ছিল যে, মৃৎশিল্প পেশার সাথে জড়িতরা মৃৎশিল্প দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতেন।তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনই ছিলো এ মৃৎশিল্প। আগে যেখানে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছিলো মাটির তৈরী তৈজসপত্রের ব্যবহার, সেখানে আজ প্লাষ্টিক, স্টিল, সিরামিক, ম্যালামাইন ও সিলবারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থে তৈরী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ব্যবহার।

শ্রীমঙ্গলে সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা জানান, কালের বিবর্তনে প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের তৈরী হাড়ি-পতিলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করেছে। এতে করে শ্রীমঙ্গলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃৎশিল্পিরা প্রচীন কাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণীভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাষ্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না।
তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার কোথাও এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পিরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পীরা জানান, দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তারা পরিবারে ফিরে পাবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পী বীণা পাল জানান, ২৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত আছেন। এর আগে বাপ-দাদারা করে গিয়েছেন। এর ঐতিহ্য ধারণ করে আজও তিনি এ মৃৎশিল্প পেশায় নিয়োজিত। তিনি জানান, এ পেশায় কাজ করে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখনও ছেলে মেয়েরা মাস্টার্স, অনার্সে লেখাপড়া করছে।