ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার ৩৫ কেজি বাঘাইড় মাছ ও ১৫ কেজি মিষ্টিতে পোড়াদহ মেলা আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনা রেলওয়ে সেতুতে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি মহাপরিদর্শক পল মার্টিন বরখাস্ত শেখ হাসিনার বক্তব্য ভারতের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করেছে: শশী থারুর বিনামূল্যে ক্যান্সার ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আগামী অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যা মামলার রায়: আসিফ নজরুল পরিবেশ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সহকারী পরিচালক বদরুন্নাহার সীমার সীমাহীন দুর্নীতি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প: পিডি উজ্জ্বল মল্লিক ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্লট হাতিয়ে নিয়েছে ময়মনসিংহে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ময়মনসিংহ জেলা মটরযান কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি সম্পাদকসহ সকলের শপদ ও দায়িত্ব গ্রহণ

মৌলভীবাজারে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোয়াঁয় হারিয়ে যাচ্ছে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এ মৃৎশিল্প। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। আধুনিক সভ্যতায় বদলে যাচ্ছে পুরোনো দিনের অনেক কিছু। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। দিন যত যাচ্ছে তার সাথে বদলাচ্ছে মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতা, প্রকৃতি আরও নানাবিধ রং। কম চাহিদা, আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতি ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

শতবর্ষী মৃৎশিল্পের তৈরী হাড়ি-পাতিল, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, টালি, টাইলসসহ হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। তদুপরি তথাকথিত আধুনিকতার ছোয়ায় যান্ত্রিক জগতে দৈনিন্দন জীবনে ব্যবহার্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্পীরা।

একটি সময় ছিল যে, মৃৎশিল্প পেশার সাথে জড়িতরা মৃৎশিল্প দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতেন।তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনই ছিলো এ মৃৎশিল্প। আগে যেখানে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছিলো মাটির তৈরী তৈজসপত্রের ব্যবহার, সেখানে আজ প্লাষ্টিক, স্টিল, সিরামিক, ম্যালামাইন ও সিলবারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থে তৈরী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ব্যবহার।

শ্রীমঙ্গলে সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা জানান, কালের বিবর্তনে প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের তৈরী হাড়ি-পতিলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করেছে। এতে করে শ্রীমঙ্গলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃৎশিল্পিরা প্রচীন কাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণীভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাষ্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না।
তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার কোথাও এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পিরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পীরা জানান, দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তারা পরিবারে ফিরে পাবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পী বীণা পাল জানান, ২৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত আছেন। এর আগে বাপ-দাদারা করে গিয়েছেন। এর ঐতিহ্য ধারণ করে আজও তিনি এ মৃৎশিল্প পেশায় নিয়োজিত। তিনি জানান, এ পেশায় কাজ করে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখনও ছেলে মেয়েরা মাস্টার্স, অনার্সে লেখাপড়া করছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

Verified by MonsterInsights

মৌলভীবাজারে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোয়াঁয় হারিয়ে যাচ্ছে

আপডেট সময় ০৪:৫৪:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এ মৃৎশিল্প। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। আধুনিক সভ্যতায় বদলে যাচ্ছে পুরোনো দিনের অনেক কিছু। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। দিন যত যাচ্ছে তার সাথে বদলাচ্ছে মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতা, প্রকৃতি আরও নানাবিধ রং। কম চাহিদা, আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতি ও জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

শতবর্ষী মৃৎশিল্পের তৈরী হাড়ি-পাতিল, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, টালি, টাইলসসহ হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। তদুপরি তথাকথিত আধুনিকতার ছোয়ায় যান্ত্রিক জগতে দৈনিন্দন জীবনে ব্যবহার্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্পীরা।

একটি সময় ছিল যে, মৃৎশিল্প পেশার সাথে জড়িতরা মৃৎশিল্প দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতেন।তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনই ছিলো এ মৃৎশিল্প। আগে যেখানে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছিলো মাটির তৈরী তৈজসপত্রের ব্যবহার, সেখানে আজ প্লাষ্টিক, স্টিল, সিরামিক, ম্যালামাইন ও সিলবারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থে তৈরী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ব্যবহার।

শ্রীমঙ্গলে সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা জানান, কালের বিবর্তনে প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের তৈরী হাড়ি-পতিলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার দখল করেছে। এতে করে শ্রীমঙ্গলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃৎশিল্পিরা প্রচীন কাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণীভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাষ্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছে না।
তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার কোথাও এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পিরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পীরা জানান, দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তারা পরিবারে ফিরে পাবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

শ্রীমঙ্গল কুমার পারার মৃৎশিল্পী বীণা পাল জানান, ২৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত আছেন। এর আগে বাপ-দাদারা করে গিয়েছেন। এর ঐতিহ্য ধারণ করে আজও তিনি এ মৃৎশিল্প পেশায় নিয়োজিত। তিনি জানান, এ পেশায় কাজ করে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখনও ছেলে মেয়েরা মাস্টার্স, অনার্সে লেখাপড়া করছে।