মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সোনার বাংলা রোড ৬ নং ওয়ার্ডে চলছে মাদক কারবার। ইয়াবা স্বপন, তার স্ত্রী ও মা-মনোয়ারা বেগম ওপেন সিক্রেটে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসা থেকে বাদ পড়েনি নারী-পুরুষ কেউই।
প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল পুলিশ প্রশাসন যেনো দেখোও দেখছে না। প্রকাশ্যে চলছে মাদক ক্রয় বিক্রয়। উক্ত বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। তবুও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বেড়েই চলেছে রমরমা মাদক ব্যবসা। শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের পাড়া-মহল্লায় অনেকটা খোলামেলাভাবেই চলছে মাদক বেচাকেনা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, সোনার বাংলা রোডে ও আরামবাগের (মুচি পট্টি) মাদক পাশাপাশি বস্তি এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একশ্রেণির সুযোগ সন্ধানীরা প্রভাব বিস্তার করছে।
জানা গেছে গত ১৭ আগস্ট ২০২৪ স্থানীয় বাসিন্দারা ও শ্রমিক ইউনিয়ন পরিবহনের লোকজন জড়ো হয়ে স্বপনের বাসায় ঘেরাও করলে ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বপন পালিয়ে যাওয়ায় তার মা মনোয়ারা বেগম হাতজোড় করে ক্ষমা চায়। তার মা ও স্ত্রী অনুরোধ করলে স্থানীয়বাসীরা মাদক ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু পরেরদিন থেকেও রীতিমতো চলছে মাদক ব্যবসা।
গত কয়েকদিন আগে রাত আনুমানিক ২ ঘটিকায় ইয়াবা স্বপনের কাছ থেকে মাদক কিনে ধরা খাওয়া একজন মাদক সেবনকারীকে জিজ্ঞাসা করলে সে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে ইয়াবা ক্রয়ের স্বীকারোক্তি দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ও মাদক সেবনে জড়িতদের দেয়া তথ্য মতে জানা গেছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কেনা-বেচা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, উপজেলার আসেপাশের পৌর শহরে মাদক বিক্রি হয়. আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কাঁচা অর্থ লোভে কিশোর ও যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে এসব ব্যবসায়। যুবসমাজ হচ্ছে বিপথগামী। ফলে পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা নেমে আসছে।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, কারো কথা ও নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা করে না, কাউকে মানে না সে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকিও দেয়।
মাদক ব্যবসায়ী স্বপনের মা মনোয়ারা বেগম স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গের দাপট খাটিয়া পুলিশ প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে তার ছেলেকে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ছিচকে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলে ও মূল ব্যবসায়ীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
মাদকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে মাদক ব্যবসায়ী স্বপনের মা মনোয়ারা বেগম সাংবাদিকের উপরে চড়াও হয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকিও দিয়ে থাকেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নাগরিক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মচ্ছিবির আল মাসুদ বলেন, এই এলাকায় মাদকের ব্যবসা হয় , নারী ব্যবসা আছে এবং ইয়াবা বিক্রি হয়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এগুলা চিহ্নিত করেছি। তাদের নাম আমরা উল্লেখ করেছি। সোমবার পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। সোমবারের মধ্যে যদি তারা এখান থেকে সরে না যায় এবং এই ব্যবসাগুলো যদি বন্ধ না করে তাহলে আমরা প্রশাসন, জনগণ সবাইকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবো।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে মাদক কারবারিদের আনাগোনা আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অপরাধ, অপরাধের মূল উপাদান কিন্তু মাদক। মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে আমাদের বর্তমান সরকার যেমন বদ্ধ পরিকর, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকেও কিন্তু এই মাদক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। একটা গোষ্ঠী মাদক ব্যবসা পরিচালনার পাঁয়তারা করছে। আমরা পুলিশরাও সেদিকে বেশ সতর্ক আছি এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি , তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালিয়েছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত আছে।