মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ এর পাশপাশে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। কারণ বর্তমানে কী পরিমাণ বনভূমি আছে তা জানে না খোদ বন বিভাগই। বিগত কয়েক দশকে বনের চারপাশের জমি যে যেভাবে পেরেছে দখলে নিয়ে সম্প্রসারণ করেছে চা-বাগান, তৈরি করেছে লেবু-আনারস-বাগান, কটেজ, বাড়িসহ নানা স্থাপনা।
বনের জমি নিজেদের দাবি করে করেছে মামলাও। প্রভাবশালী মহলের বাধা, রক্তচক্ষু ও নানাবিদ কারণে বনটির আয়তন পরিমাপ করতে পারেনি বন বিভাগ। তারা জানে না ঠিক কতটুকু জমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। এরই মধ্যে সম্প্রতি শুরু করেছে উচ্ছেদ অভিযান।
জানা যায়, পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া বনটিকে সরকার ১৯৯৬ সালে ‘জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করে। রেইন ফরেস্ট হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত এ বন বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এ বনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদসহ নানা জীবজন্তু। কিন্তু গত ২৮ বছরেও বনের সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি বন বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণার পূর্ব থেকেই বনটিতে দখলের থাবা বসিয়েছে আশপাশের কিছু বাসিন্দা। নিজেদের জমির সঙ্গে বনের জমি দখলে নিয়ে বাড়িঘর তৈরি ও লেবু-আনারস-বাগানের সীমানা বর্ধিত করলেও প্রকৃতপক্ষে দখলের মচ্ছব শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিজের কেনা স্বল্প জমির সঙ্গে লাউয়াছড়া উদ্যানের অনেকটা দখল করে চা-বাগানে যুক্ত করেছেন। সে সময় থেকেই বন বিভাগ বারবার জমি পরিমাপের উদ্যোগ নিয়েও করতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার সূত্র জানিয়েছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি দখলবাজরা প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগ বা পতিত সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের প্রভাবের কারণেই বন ডিমারকেশন (পরিমাপ) করা যায়নি। তাদের (দখলবাজদের) ভয়ে বন বিভাগই থাকত তটস্থ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বন বিভাগ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। শুরু করে বনের জমি উদ্ধার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, বদরুল আলম জেনার নামে একজন বনভূমি দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া বনভূমি দখল করেছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদও। এককথায় বলা যায়, লাউয়াছড়া বনের ক্ষেত্রে ‘রক্ষকই ভক্ষক’। যারা বনভূমি দখল করেছিলেন প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘বনের জমি উদ্ধারের সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। কেউ জমির মালিকানা দাবি করতেও আসেনি।’
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুই দফায় বনের নয় একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।