উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বগুড়ার শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া কামিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মাওলানা ইয়াসিন আলীকে রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ ৪১ বছরের শিক্ষকতা জীবনের শেষদিন সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে তাঁকে নিজ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
এর আগে একইদিন বেলা ১০টায় ওই শিক্ষকের অবসর গ্রহণ উপলক্ষ্যে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন মাদ্রাসাটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। এটিকে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করলেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। চাকরি জীবনের বিদায়বেলায় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত মাওলানা ইয়াসিন আলী উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে র্দীঘ ৩৫ বছর ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি ৬ বছর স্থানীয় খামারকান্দি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার ছিল মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী শিক্ষক ইয়াসিন আলীর চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস। তাই তাঁকে বিদায় জানাতে সাজানো হয় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ। আলোচনা সভার পর তাঁকে জানানো হয় সম্মাননা। পরে প্রিয় শিক্ষককে কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে। টমটম গাড়ির আগে পিছে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ছিল মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের বহর। গাড়িতে ওঠার সময় বিদায়ী শিক্ষককে ফুল ছিটিয়ে ও ফুলের মালা পরিয়ে বিদায় জানানো হয়। প্রিয় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের এমন আয়োজনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন মাওলানা ইয়াসিন আলী।
এ সময় তিনি বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি কিন্তু দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা নিজেদের আদর্শবান এবং মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তিনি যখন এমন উপদেশ দিচ্ছিলেন তখন শিক্ষার্থীদের কাঁদতে দেখা যায়।
মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, বিদায় বড় কষ্টের তবুও মানতে হবে। আমাকেও এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁকে সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দিলেন সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। জমকালো এই ব্যতিক্রমী আয়োজন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ আব্দুল হাই বারী, মাওলানা আমানুল্লাহ, আবু জাফর, একে আজাদ, মোহাম্মদ আলী, শাহীন আলম, সমাজসেবক আবুল কাশেম মন্ডল, আবুল হোসেন, শফিকুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।