স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাজশাহী জেলার আওয়ামী পন্থী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাশির উদ্দিন প্রায় তিন বছর তার ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এলজিইডির সুনাম ধবংস করে ফেলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. নাশির উদ্দিন দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও আড়াই হাজার উপজেলায় উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় রাতের ভোটের এমপি সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (নারায়ণগঞ্জ-১) এবং নজরুল ইসলাম বাবুর (নারায়ণগঞ্জ-২) ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে টেন্ডারবাজী ও নির্মাণ কাজের তদারকিতে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এবং নিজেকে একজন খাঁটি আওয়ামী লীগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে ৫০ লক্ষ টাকা উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতাক্রম ভঙ্গ করে বিভাগীয় শহর রাজশাহী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়িত হয়।
রাজশাহী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর হতেই টেন্ডার বাণিজ্য, নিম্নমানের কাজের বিল প্রদান এবং নানা রকম অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। নাশির নিজেকে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের (পলাতক) ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় ডিপার্টমেন্ট তার বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
পরবর্তীতে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ এলজিইডির সভাপতি মো. আলী আকতার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর একই এলাকার মানুষ হিসেবে মো. নাশির উদ্দিনের ক্ষমতার পরিধি চরমভাবে বৃদ্ধি পায়। আলি আখতার হোসেনের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে রাজশাহী বিভাগের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, বদলি বাণিজ্যসহ নানা রকম দুর্নীতির মহোৎসব শুরু হয়।
রাজশাহী জেলায় চলমান RCIP, SupRB, GOB Maintenance সহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিশেষত বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে নিম্নমানের কাজের বিপরীতে বিল প্রদানসহ বিভিন্ন আইটেমের কাজ না করা সত্ত্বেও বিল প্রদান করেন তিনি।
৫ই আগস্ট, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান হলেও মো. আলী আকতার হোসেন এর বদৌলতে মো. নাশির উদ্দিন স্বপদে বহাল থাকে। এতে রাজশাহীর বঞ্চিত ঠিকাদারদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে প্রায় একই রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মো. নাশির উদ্দিন রাজশাহী এলজিইডিতে যোগদানের পর হতে প্রায় ৩ বছর আওয়ামী ঠিকাদার ছাড়া অন্য কেউ কাজ পাওয়া তো দূরের কথা অফিসের বারান্দায় পা পর্যন্ত রাখতে পারেননি তারা। এরপরও সে এখন পর্যন্ত এখানে কীভাবে টিকে থাকে তা এক বিস্ময়ের ব্যাপার!
জানা যায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আকতার হোসেন রাজশাহী জেলায় তার শেষ মিটিং করার পর প্রায় ১৫ দিন পলাতক থাকা অবস্থায় ২০ অক্টোবর, ২০২৪ তার চাকুরির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে থেকে এলজিইডিকে অস্থিতিশীল করে বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তার এ সকল কর্মকান্ডের প্রধান সহযোগী প্রকৌশলী মো. নাশির উদ্দিন।
এলজিইডির আওয়ামী পন্থীদের ঐক্যবদ্ধ করা এবং এলজিইডিতে চলমান আন্দোলনে অর্থের যোগানদাতা হিসেবে গোপনে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আকতার হোসেন প্রধান প্রকৌশলীর পদের মেয়াদ শেষের পর এখন পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকলেও গত ২০ নভেম্বর, ২০২৪ গোপনে রাজশাহীতে এসে শুধুমাত্র মো. নাশির উদ্দিনের সাথে গোপন শলাপরামর্শ করেছেন।
এ ব্যাপারে এলজিইডির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাজশাহীর আপামর ঠিকাদারবৃন্দ। তারা বলেন, এই দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাশির উদ্দিনকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে এবং দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তারা আরও বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাশির উদ্দিনকে অপসারণ করা না হলে রাজপথে বিক্ষোভসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাশির উদ্দিন এর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।