সাম্প্রতিক ভারত–বাংলাদেশ কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে চীন সুযোগটির সুফল নিতে বাংলাদেশকে আরও কাছে টানতে উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা ও দূরত্ব বাড়ার প্রেক্ষাপটে, চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্বকারী সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
বাংলাদেশের বিএনপির নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ১০ দিনের সফরে চীন পৌঁছে গেছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০:৪০ মিনিটে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন। দলের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চীন সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিনিধি দলের এক নেতা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, সফরকালে তারা চীনের সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চীনের জন্য বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবের আওতায় আনার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় গ্রহণ ও তার পরবর্তীতে উত্থাপিত নানা অভিযোগ ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়।
বিএনপির সিনিয়র নেতা ও প্রতিনিধি দলের প্রধান আব্দুল মঈন খান জানান, “চীনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সৌজন্যমূলক সফরে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আমাদের দল এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।” উল্লেখ্য, দলের সদস্যদের মধ্যে বিএনপি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সংখ্যা বেশি, যারা সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভে সক্রিয় ছিল।
শেখ হাসিনার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সময়কালীন ভারতবান্ধব পররাষ্ট্র নীতি থাকা সত্ত্বেও, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার প্রবণতা ছিল। তবে তার পতনের পর চীন ঢাকার সঙ্গে নিজেদের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার চেষ্টা করছে। জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বেইজিং সফরও এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার; দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার, যার বেশিরভাগই চীনা রপ্তানি। এছাড়াও, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রায় ৭০ শতাংশ সরঞ্জাম চীন থেকে আমদানি করা হয়।
বর্তমান ভারত–বাংলাদেশ কূটনৈতিক দূরত্ব ও উত্তেজনা চীনের জন্য ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ পরিস্থিতি উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন সমন্বয়ের সূচনা করতে পারে।