ঢাকা ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
মৌলভীবাজারে রোজাদার পথচারীদের মাঝে তারেক রহমানের উপহার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬টি সংস্থার নাম পরিবর্তন গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের আবির্ভাব বরদাস্ত করা যাবে না: ইশরাক কারা নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে, জানালেন হাইকোর্ট ফটোশপ করে আহত দেখিয়ে সহায়তা দাবি, ধরা খেলেন গাজীপুরের নয়নসহ ৩ জন লোহিত সাগরে ফের ইসরায়েলি জাহাজে হামলার হুমকি মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুরটির শারীরিক অবস্থার অবনতি দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসবে না ইরান: মাসুদ পেজেশকিয়ান অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই আরব সাগরে যৌথ মহড়া: ইরান-রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত চীন পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেনে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের পিতৃপুরুষ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর ৮৯তম জন্মদিন আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি)। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের ডাকনাম ‘কমল’। শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেন। বীর উত্তম জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পিতৃপুরুষ।

জিয়াউর রহমানের শৈশব কাটে কলকাতা ও করাচিতে। পিতার চাকরির কারণে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানে তিনি করাচি একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর, ১৯৫৩ সালে তিনি করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন এবং একই বছরে কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।

সামরিক জীবনে জিয়াউর রহমান ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসের পরিচয় দেন এবং তার জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে “হিলাল-ই-জুরাত” খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়, জিয়াউর রহমান ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন ২৫ মার্চ পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করে, তখন স্বাধীনতাকামী মানুষ অভিভাবকহীন, নেতৃত্বহীন, সিদ্ধান্তহীনভাবে চরম অসহায়ত্ব, অনিশ্চয়তা, হতাশা এবং ভীতির মধ্যে নিপতিত হয়। এ সঙ্কটময় সময়ে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দী করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বীরোচিত ঘোষণা করেন: “আমি মেজর জিয়া বলছি”, এতে গোটা জাতি আন্দোলিত হয়। মেজর জিয়ার এ অকুতোভয় ঘোষণা গোটা দেশে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অনিশ্চয়তার অবসান ঘটায়। ঐক্যবদ্ধভাবে সাধারণ মানুষ (জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে) মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৪৪তম ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি কর্নেল পদে উপ-সেনাপ্রধান হন এবং ১৯৭৩ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার ও পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হবার পর তারই সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে শহীদ জিয়া বন্দী হলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঘটনা প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় নেতৃত্বের হাল ধরেন।

১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট তিনি সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন। এরপর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ক্ষমতায় এসেই তিনি বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি শুরু করেছিলেন উৎপাদনের রাজনীতি, দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব, সেচ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষর দান করেন। এছাড়া গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।

জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি যুগান্তকারী ধারণা। তিনি বুঝেছিলেন, আমাদের পরিচয় কেবল ভাষা বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে সম্মান করে একটি জাতির পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সূচনা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সুবিচারের এক সম্মিলিত আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। তাঁর জানাজার সময় লাখো লাখো মানুষের সমাগম ঘটে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জনসমাবেশ হিসেবে আজও চিহ্নিত হয়ে আছে।

আজ যখন আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উদযাপন করছি, তখন তাঁর অবদান, সাহস, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। তাঁর আদর্শ আমাদের ঐক্য ও মানবিকতাকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করে। জিয়াউর রহমানের এই বিশাল অবদান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কিভাবে এক শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাসের পটভূমিতে আমরা স্বাধীনতার সূর্য উজ্জ্বল করেছি।

শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা আজও আমাদের সামনে প্রেরণা জোগায়। তাঁর চিন্তা ও দর্শন আজও আমাদের হৃদয়ে জীবন্ত, আমাদের পথপ্রদর্শক, একটি গর্বিত ও স্বাধীন জাতির স্বপ্নের চেতনায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন ও নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত আমাদের শেখায় কিভাবে একত্রিত হয়ে একটি সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাঁর বীরত্ব ও নেতৃত্বের কথা জাতির ইতিহাসে চিরকাল অমলিন থাকবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মৌলভীবাজারে রোজাদার পথচারীদের মাঝে তারেক রহমানের উপহার

Verified by MonsterInsights

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের পিতৃপুরুষ

আপডেট সময় ০৪:১২:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর ৮৯তম জন্মদিন আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি)। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের ডাকনাম ‘কমল’। শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেন। বীর উত্তম জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পিতৃপুরুষ।

জিয়াউর রহমানের শৈশব কাটে কলকাতা ও করাচিতে। পিতার চাকরির কারণে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানে তিনি করাচি একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর, ১৯৫৩ সালে তিনি করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন এবং একই বছরে কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।

সামরিক জীবনে জিয়াউর রহমান ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসের পরিচয় দেন এবং তার জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে “হিলাল-ই-জুরাত” খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়, জিয়াউর রহমান ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন ২৫ মার্চ পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করে, তখন স্বাধীনতাকামী মানুষ অভিভাবকহীন, নেতৃত্বহীন, সিদ্ধান্তহীনভাবে চরম অসহায়ত্ব, অনিশ্চয়তা, হতাশা এবং ভীতির মধ্যে নিপতিত হয়। এ সঙ্কটময় সময়ে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দী করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বীরোচিত ঘোষণা করেন: “আমি মেজর জিয়া বলছি”, এতে গোটা জাতি আন্দোলিত হয়। মেজর জিয়ার এ অকুতোভয় ঘোষণা গোটা দেশে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অনিশ্চয়তার অবসান ঘটায়। ঐক্যবদ্ধভাবে সাধারণ মানুষ (জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে) মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৪৪তম ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি কর্নেল পদে উপ-সেনাপ্রধান হন এবং ১৯৭৩ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার ও পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হবার পর তারই সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে শহীদ জিয়া বন্দী হলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঘটনা প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় নেতৃত্বের হাল ধরেন।

১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট তিনি সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন। এরপর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ক্ষমতায় এসেই তিনি বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি শুরু করেছিলেন উৎপাদনের রাজনীতি, দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব, সেচ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষর দান করেন। এছাড়া গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।

জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি যুগান্তকারী ধারণা। তিনি বুঝেছিলেন, আমাদের পরিচয় কেবল ভাষা বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে সম্মান করে একটি জাতির পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সূচনা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সুবিচারের এক সম্মিলিত আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। তাঁর জানাজার সময় লাখো লাখো মানুষের সমাগম ঘটে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জনসমাবেশ হিসেবে আজও চিহ্নিত হয়ে আছে।

আজ যখন আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উদযাপন করছি, তখন তাঁর অবদান, সাহস, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। তাঁর আদর্শ আমাদের ঐক্য ও মানবিকতাকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করে। জিয়াউর রহমানের এই বিশাল অবদান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কিভাবে এক শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাসের পটভূমিতে আমরা স্বাধীনতার সূর্য উজ্জ্বল করেছি।

শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা আজও আমাদের সামনে প্রেরণা জোগায়। তাঁর চিন্তা ও দর্শন আজও আমাদের হৃদয়ে জীবন্ত, আমাদের পথপ্রদর্শক, একটি গর্বিত ও স্বাধীন জাতির স্বপ্নের চেতনায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন ও নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত আমাদের শেখায় কিভাবে একত্রিত হয়ে একটি সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাঁর বীরত্ব ও নেতৃত্বের কথা জাতির ইতিহাসে চিরকাল অমলিন থাকবে।