১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালিরা পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতা লাভ করে এবং পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আজ, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, বাংলাদেশ বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তির দিন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নৃশংসভাবে বাংলাদেশের ঘুমন্ত সাধারণ মানুষের ওপর গণহত্যা চালায়। এরপরই বাঙালিরা শুরু করে তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম। যদিও তাদের হাতে ছিল না যুদ্ধের প্রশিক্ষণ বা আধুনিক সমরাস্ত্র, তবুও দেশের স্বাধীনতার জন্য তারা জীবন বাজি রেখে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত ছিলেন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয় ঘটে।
বিজয় দিবসের উদযাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে, যা দেশের বিজয়ের মুহূর্তকে স্মরণ করবে। আজ সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। এছাড়া, আলোচনা সভা এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আসুন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ি।”
প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেছেন, “বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।”
এছাড়া, বাংলাদেশ নৌবাহিনী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৩২ জন জুনিয়র কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারকে সম্মানসূচক কমিশন দিয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, মাস্টার চিফ পেটি অফিসার (এমসিপিও) পদমর্যাদার জুনিয়র কমিশনড অফিসারদের অনারারি সাব-লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
আজকের এই গৌরবময় দিনটি দেশের ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।