দেশে সবচেয়ে বেশি লেবু উৎপাদন হয় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। গড়ে প্রতি পিস লেবু বিক্রি হচ্ছে পূর্বের দামের তুলনায় তিনগুণ বেশিতে।
পবিত্র রমজান মাসে লেবুর বাজার চড়া। এই দুই উপজেলায় রয়েছে শতাধিক লেবুর আড়ত। এলাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লেবু পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। রমজানে বাজারে লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে লেবুর দাম আকাশ ছোঁয়া।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের প্রচুর পরিমাণে লেবু চাষ হলেও শুষ্ক মৌসুমে লেবুর উৎপাদন কম। সবুজ চা বাগান বেষ্টিত উচুঁ নিচু পাহাড়ি টিলায় ঘেরা মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে টিলায় সারি সারি লেবু বাগান। উৎপাদনের মৌসুম না থাকায় প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারী ও খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু।
অপরদিকে, গাছে যে লেবু আসছে সেটার আকারও অনেক ছোট। এদিকে লেবুর মৌসুমে উন্নত মানের কাগজি, চায়না, জারা, আদা, পাতি ও সিডলেস লেবু বিক্রি হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। হালি প্রতি প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০-১২০ টাকা মূল্যে। পাইকারি বাজারে হালি ৪০-১৪০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে তা ৮০-১৫০ টাকা ছুঁয়েছে।
লেবু বাগানের মালিকরা জানান, ‘এখন লেবুর মৌসুম না থাকায় লেবুর দাম বাড়তি। লেবু বাগানের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছি, কিন্তু বাগানে ফল নেই। শুকনা সময় লেবু হয় না। লেবু না থাকার কারণে দাম বেড়েছে। বাগানে কত টাকা খরচ হয়েছে কত আর পাবো! মানুষ ভাবছে এই লেবুর অনেক দাম, রমজান মাস উপলক্ষে বাগান মালিকরা লেবু বাগানে স্টক করে রাখি। অন্য বছরের তুলনায় এবার লেবু কম হয়েছে। প্রথমদিকে লেবুর দাম বেড়েছে। লেবু বাগানে সার ও গোবর দিতে হয়। মেশিন দিয়ে পানি দিতে হয়, বিভিন্ন ধরনের খরচ আছে। এই লেবু বাগান থেকে পরিমাণে আমরা টাকা সেরকম পাই না।’
এক লেবু বাগান মালিক জানান, ‘আমার ৬ হেক্টর জমিতে বাগান রয়েছে। এই বছর একটা লেবুও বিক্রি করতে পারি নাই। লেবু যারা বাজারে বিক্রি করছে, তারা ৬ মাস আগে বাগানে গাছে লেবু রেখেছে। এখন তারা ভালো দামে লেবু বিক্রি করতে পারছে। কিন্তু লেবু সবাই বিক্রি করতে পারছে না। বাগানের মালিকরা আগেই লেবু স্টক করে রেখেছিল, তাই এত দামে বিক্রি করছে।’
শ্রীমঙ্গলের নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, ‘আমি আড়ত থেকে নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করি। আমি লেবু বিক্রি করি ঢাকা-সিলেটে। অনেক বাগনের মালিক রয়েছেন লেবু বাগানে স্ট্রোক করে রাখেন। বাগানের মালিকদের যদি অভিযান চালানো হতো, তাহলে বাজারে দাম ঠিক মতো আসতো। আমাদের তো কিছু নেই, আমরা দাম দিয়ে কিনে দাম দিয়ে বিক্রি করি। আমরা লেবুর ব্যবসা করি ঠিক আছে। লেবুর বিভিন্ন কোয়ালিটি রয়েছে। চৈত মাসে লেবুর দাম এমনিতেই বেশি থাকে। আমদের তো স্টক করা প্রশ্নেই আসে না। কাঁচামাল একদিন পড়ে থাকলে পরেরদিন ভালো দামে আর বিক্রি করা হয় না। বাগানের মালিক সকলের বাগানে লেবু নেই। যারা বড় বাগান মালিক তাদের কিছু লেবু রয়েছে। বড় বাগান মালিক যারা আছে তারা মনে করে, লেবু স্টক করে রেখেছে যারা ছোট বাগান মালিক রয়েছে তাদের স্টকে নেই। এই কারণে লেবুর চাহিদা বেশি। চাহিদা বেশি, দামও বেশি। বর্তমানে বাগান মালিকরা লাভবান আছেন। তারা একটু কষ্টের বিনিময়ে বাগানে লেবু স্টক করে ধরে রেখেছে।’
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লেবু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “লেবু কম থাকার কারণ হলো ৬-৭ মাস থেকে বৃষ্টি হয়নি। লেবুর বড় বাগানের মালিক যারা আছে, সেচ দিতে পারে। এই বাগান মালিকরা যারা সেচ সার দিতে পারছে তারা এখন লেবু বিক্রি করতে পারছে।”
তিনি আরও বলেন, “শতকরা ৮০ ভাগ বাগান মালিকদের বাগানে লেবু নেই। খড়ার কারণে লেবু গাছ মরে যাচ্ছে। লেবু বড় সাইজ থেকে ছোট সাইজের রয়েছে বাজারে। বড় সাইজের লেবু বাজারে ১৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। উপরে ১৫ টাকা দেখলে হতো না, নিচের লেবু ৩ টাকাও বিক্রি হবে না। ক্রেতারা নিবে না তিন টাকার পিসের লেবুটা।”
মৌলভীবাজার জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, “মৌলভীবাজার জেলাতে লেবুর চাষ হয় ১৭৬২ হেক্টর জমিতে। বাৎসরিক উৎপাদন হয় ২৮ হাজার মেট্রিক টন। কিছু কিছু বাগান মালিক স্টক করে রাখতে পারে, তবে আমার মনে হয় স্টক করে রাখে এটা ব্যবসায়ীদের কৌশল। তারপরও রমজান মাসে আমরা সবাই জানি যে, লেবুর চাহিদা স্বাভাবিকভাবে একটু চাহিদা বেড়ে যাওয়া একটি কারণ হতে পারে।”