ঢাকা ০৯:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্ট্যাটাস তাড়াশে পুকুর ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি, হাত-পা বেঁধে স্বর্ণ-টাকা লুট মৌলভীবাজারে অবাধে চলছে কৃষি জমির মাটি বিক্রির উৎসব, প্রশাসনের নীরবতা কুয়াশায় ঘেরা মৌলভীবাজারে রোদের দেখা নেই লিভারপুল কিনতে পারেন ইলন মাস্ক লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বিডিআর ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যমুনার দিকে পদযাত্রা আটকে দিলো পুলিশ ব্যাংকে ডলারের সংকট নেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা দাবি আদায়ে খোলা মাঠ বেছে নিন: ডিএমপি কমিশনার ট্রাম্পের কানাডাকে ৫১তম রাজ্য করার প্রস্তাব, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর পদত্যাগ শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের মেয়াদ বাড়াল নয়াদিল্লি জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণার পর উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা

মৌলভীবাজারে অবাধে চলছে কৃষি জমির মাটি বিক্রির উৎসব, প্রশাসনের নীরবতা

মৌলভীবাজারে প্রশাসনে নীরবতার সুযোগে অবাদে চলছে কৃষিরজমির মাটি বিক্রি। এতে উর্ব্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। প্রশাসনিকভাবে নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। বরং অনেক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ মাটি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটা, বাড়ি নির্মাণ, গর্ত ভরাট এই সমস্ত কাজে। মাটি বহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টরসহ ভারী ট্রাক। আর এই সমস্ত ভারী গাড়ি চলতে গিয়ে গ্রামগঞ্জের কাঁচা পাঁকা রাস্তাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছ।

কিছু দালাল সুকৌশলে ফসলি জমির মালিককে প্রলোভন দেখিয়ে মাটি বিক্রিতে উৎসাহী করছে। মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে ফসলি জমিগুলোর উর্বরতা না থাকায় আবাদ হয় না। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে দিনদিন পরিবেশের মধ্যে পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়ন, সাতগাও কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট, শম্যারকোনা, রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর, আশ্রাকপন, চৌধুরীবাজার, মহলাল, বালিসহস্রসহ সারা জেলার অসংখ্য স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে আবাদি জমির মাটি। কৃষি বিভাগের ভাষায় যাকে টপ সয়েল (মাটির উপরের উর্বর অংশ) বলে।

জমির মালিকরা সামান্য টাকার লোভে ইটভাটা ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পরে ফসলি জমির এ টপ সয়েল বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আবাদযোগ্য জমির উর্ব্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। ভাটার ইট তৈরী, রাস্থা নির্মাণ, বসতভিটা উচু করাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে এই মাটি ব্যব‎হৃত হচ্ছে।

প্রতি বছর ডিসেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাস ইটভাটার ব্যবসায়ীরা দালালের মাধ্যামে সহজ সরল কৃষক ও জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে আবাদি জমির মাটি ক্রয় করেন। জমির মালিকরা এর কুফল বিবেচনা না করে স্বল্প দামে আবাদি জমির এ ‘টপ সয়েল’ বা শীর্ষ মাটি বিক্রি করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, এ বছর রাজনগরে ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষকরা আমন ধান আবাদ না করতে পারায় অভাবের কারণে ফসলি জমির মাটি বিক্রি অনেকটা বেড়ে গেছে।

এলাকায় অসংখ্য ইট ভাটা থাকায় প্রভাবশালী ইট ভাটার মালিকদের লোকজন অতি কৌশলে জমির মালিকদের লোভ দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করে। ড্রেজার মেশিন ও ট্রাক দিয়ে জমি গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। স্থানীয় হিসাবে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটির দাম দূরত্ব, অবস্থান ও প্রকার ভেদে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার দূরত্ব অনুযায়ী পরিবহন খরচের ওপর মাটির দাম কম-বেশি হয় বলে বেশ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী জানান।

মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে মাটি কিনে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটিতে ৩শ থেকে ৪শ টাকার লাভে জেলার বিভিন্ন ইটভাটা মালিক এবং রাস্থা নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে। এর মধ্যে ইট পোড়ানোর উপযোগী মাটির মূল্য বেশি।

কৃষি ফসলের মাঠের ক্ষতি সাধনসহ কৃষিক্ষেত্রে এসব অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে কৃষি বিভাগের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে।

জমির মলিকদের ধারণা সাময়িকভাবে জমির কিছুটা ক্ষতি হলেও বিভিন্ন ধরণের সার দিলে উর্বরতা শক্তি স্বাভাবিক থাকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, প্রতি বছর টপ সয়েল বিক্রি বা অপসারণের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পার্শ্ববর্তী আবাদি জমির চরম ক্ষতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও গাছপালার ভিত দুর্বল হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীণ রাস্থাঘাট। ধূলাবালিতে সয়লাভ মানুষের বসতবাড়ি। নেতিবাচক এসব কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি বিক্রির সময় মোবাইল ফোনে অবগত করলে পরে দেখবেন বলে জানান।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার অপরাধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালানা করে থাকি। আমরা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা পর্যন্ত করেছি। এখন আপনারই বলেন আমরা আর কি করতে পারি!

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্ট্যাটাস

মৌলভীবাজারে অবাধে চলছে কৃষি জমির মাটি বিক্রির উৎসব, প্রশাসনের নীরবতা

আপডেট সময় ০৭:২৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

মৌলভীবাজারে প্রশাসনে নীরবতার সুযোগে অবাদে চলছে কৃষিরজমির মাটি বিক্রি। এতে উর্ব্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। প্রশাসনিকভাবে নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। বরং অনেক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ মাটি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটা, বাড়ি নির্মাণ, গর্ত ভরাট এই সমস্ত কাজে। মাটি বহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টরসহ ভারী ট্রাক। আর এই সমস্ত ভারী গাড়ি চলতে গিয়ে গ্রামগঞ্জের কাঁচা পাঁকা রাস্তাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছ।

কিছু দালাল সুকৌশলে ফসলি জমির মালিককে প্রলোভন দেখিয়ে মাটি বিক্রিতে উৎসাহী করছে। মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে ফসলি জমিগুলোর উর্বরতা না থাকায় আবাদ হয় না। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে দিনদিন পরিবেশের মধ্যে পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়ন, সাতগাও কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট, শম্যারকোনা, রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর, আশ্রাকপন, চৌধুরীবাজার, মহলাল, বালিসহস্রসহ সারা জেলার অসংখ্য স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে আবাদি জমির মাটি। কৃষি বিভাগের ভাষায় যাকে টপ সয়েল (মাটির উপরের উর্বর অংশ) বলে।

জমির মালিকরা সামান্য টাকার লোভে ইটভাটা ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পরে ফসলি জমির এ টপ সয়েল বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আবাদযোগ্য জমির উর্ব্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। ভাটার ইট তৈরী, রাস্থা নির্মাণ, বসতভিটা উচু করাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে এই মাটি ব্যব‎হৃত হচ্ছে।

প্রতি বছর ডিসেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাস ইটভাটার ব্যবসায়ীরা দালালের মাধ্যামে সহজ সরল কৃষক ও জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে আবাদি জমির মাটি ক্রয় করেন। জমির মালিকরা এর কুফল বিবেচনা না করে স্বল্প দামে আবাদি জমির এ ‘টপ সয়েল’ বা শীর্ষ মাটি বিক্রি করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, এ বছর রাজনগরে ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষকরা আমন ধান আবাদ না করতে পারায় অভাবের কারণে ফসলি জমির মাটি বিক্রি অনেকটা বেড়ে গেছে।

এলাকায় অসংখ্য ইট ভাটা থাকায় প্রভাবশালী ইট ভাটার মালিকদের লোকজন অতি কৌশলে জমির মালিকদের লোভ দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করে। ড্রেজার মেশিন ও ট্রাক দিয়ে জমি গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। স্থানীয় হিসাবে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটির দাম দূরত্ব, অবস্থান ও প্রকার ভেদে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার দূরত্ব অনুযায়ী পরিবহন খরচের ওপর মাটির দাম কম-বেশি হয় বলে বেশ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী জানান।

মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে মাটি কিনে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটিতে ৩শ থেকে ৪শ টাকার লাভে জেলার বিভিন্ন ইটভাটা মালিক এবং রাস্থা নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে। এর মধ্যে ইট পোড়ানোর উপযোগী মাটির মূল্য বেশি।

কৃষি ফসলের মাঠের ক্ষতি সাধনসহ কৃষিক্ষেত্রে এসব অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে কৃষি বিভাগের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে।

জমির মলিকদের ধারণা সাময়িকভাবে জমির কিছুটা ক্ষতি হলেও বিভিন্ন ধরণের সার দিলে উর্বরতা শক্তি স্বাভাবিক থাকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, প্রতি বছর টপ সয়েল বিক্রি বা অপসারণের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পার্শ্ববর্তী আবাদি জমির চরম ক্ষতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও গাছপালার ভিত দুর্বল হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীণ রাস্থাঘাট। ধূলাবালিতে সয়লাভ মানুষের বসতবাড়ি। নেতিবাচক এসব কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি বিক্রির সময় মোবাইল ফোনে অবগত করলে পরে দেখবেন বলে জানান।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার অপরাধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালানা করে থাকি। আমরা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা পর্যন্ত করেছি। এখন আপনারই বলেন আমরা আর কি করতে পারি!