ঢাকা ০৪:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
ঢাকা ওয়াসায় কর্মচারীরা বিক্ষোভ: ডিএমডি (অর্থ ও প্রশাসন) আকতারুজ্জামানকে বের করে দিয়েছে কর্মচারীরা মাগুরায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যানী পূজা মিঠাপুকুরে জোরপূর্বক কৃষকের জমির ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন: জনমনে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা শ্রীমঙ্গলে সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক- ৬ যশোরে টেন্ডার নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় যুবদল নেতা বহিষ্কার ওজন নিয়ে সমালোচনার জবাবে সোজাসাপটা জবাব দিলেন সামান্থা সংসার করতে চান বাঁধন, একান্ত সঙ্গীর খোঁজে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলেন বাইডেন ঝিনাইদহের সাবেক এমপি তাহজীব সিদ্দিকী গ্রেপ্তার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

গাজীপুরে এতিমের গরু বিক্রি করে জরিমানার আদায় করলেন বিএনপি নেতা

এতিম নাতির বিয়ের খরচ যোগাতে একটি বকনা গরু পালছিলেন হতদরিদ্র ষাটোর্ধ জাহাম্মদ আলী। এক আত্মীয়কে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ায় তার উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই কামরুল ও তার সহযোগীরা।

ওই বৃদ্ধাকে নির্যাতন করে তার এতিম নাতির বিয়ের জন্য লালন পালন করা একমাত্র বকনা গুরুটি বিক্রি করেদেন ওই নেতারা, হাতিয়ে নেন গরুবিক্রির সমোদয় টাকা। একটি হতদরিদ্র পরিবারের উপর এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামে।

ভূক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির (৬৫) ওই গ্রামের মৃত আলী আকবর ফকিরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ঝাড়ু বিক্রেতা।

অভিযুক্তরা হলেন কাওরাইদ ইউনিয়নের চার নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই শ্রমিকদল নেতা কামরুল ইসলাম, তাদের সহযোগী একই গ্রামের ইব্রাহীম, রাণা, রমজান-১, রমজান-২, ওসমানসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী জামিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, গত রবিবার ২৭ অক্টোবর ভোর ৬টার দিকে ইব্রাহীম তাকে ফোন করে জানায় তার এক আত্মীয় আল আমীন একটি মেয়েসহ আটক আছে। খবর পেয়ে জাহাম্মদ স্থানীয় তারকাটা বাজারে যান। সেখানে ইব্রাহীম ও তার সহযোগীরা আল আমীনকে ছেড়ে দিতে টাকা দাবী করে। ওই সময় আল আমীন টাকা দিতে অপারগ হয়। পরে আল আমীন ও তার প্রেমিকা স্মৃতিকে দশ হাজার টাকার চুক্তিতে জাহাম্মদ আলীর জিম্মায় দেয়। বিকেলের মধ্যে আল আমীন ওই টাকা দিতে পারেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে অভিযুক্তরা জাহাম্মদ আলী ও আল আমীন জুটিকে তারকাটা বাজারে ডেকে নেয়। জাহাম্মদ আলীর বাড়িতে ওই প্রেমিক জুটি রাখার অপবাদ দিয়ে বৃদ্ধ জাহাম্মদকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে অভিযুক্তরা।

এ সময় জাহাম্মদ আলীর নিকট পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে অভিযুক্তরা। পরে তা কমিয়ে ত্রিশ হাজার দাবী করা হয়। হতদরিদ্র জাহাম্মদ টাকা দিতে পারেনি। ওই টাকা আদায় করতে এতিম নাতি রাকিবুলের বিয়ের জন্য রাখা বকনা গরুটি স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে ডেকে তার নিকট বিক্রি করে অভিযুক্তরা। এ সময় ইব্রাহীম জাহাম্মদ আলীর স্ত্রীর হাতে ছয় হাজার টাকা দিয়ে গরু বিক্রির সমস্ত টাকা নিয়ে যায়।

একটি হতদরিদ্র পরিবারের গরু বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গরুর খাবারের গামলার (পাত্র) সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন জাহাম্মদ দম্পতি।

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে জাহাম্মদ বলেন, একমাত্র এতিম নাতি রাকিবুলকে একটি বকনা গরু কিনে দিয়েছিলাম। গরুটি লালন পালন করছিলাম বড় করে তার বিয়ে টাকা যোগাড় করবো, সে ভাগ্য হলোনা। অভিযুক্তরা বিএনপি দলের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে নির্যাতন করে, বাড়ি পুড়িয়ে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। মিথ্যা অভিযোগে পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্যের গরু বিক্রি করে সে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা বাবলু সরকারকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন।

কাওরাইদ ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. মমিনুল কাদের বলেন, আমার নিকট থেকে আটক যুবক যুবতীর অভিভাবকগণ স্বাক্ষর করে জিম্মায় নিয়ে যান। ওই জিম্মানামায় জাহাম্মদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। গরু বিক্রির বিষয়ে তিনি জানেন না।

কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল হক মন্ডল বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ এমন অপরাধ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা ওয়াসায় কর্মচারীরা বিক্ষোভ: ডিএমডি (অর্থ ও প্রশাসন) আকতারুজ্জামানকে বের করে দিয়েছে কর্মচারীরা

গাজীপুরে এতিমের গরু বিক্রি করে জরিমানার আদায় করলেন বিএনপি নেতা

আপডেট সময় ০৯:৪০:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

এতিম নাতির বিয়ের খরচ যোগাতে একটি বকনা গরু পালছিলেন হতদরিদ্র ষাটোর্ধ জাহাম্মদ আলী। এক আত্মীয়কে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ায় তার উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই কামরুল ও তার সহযোগীরা।

ওই বৃদ্ধাকে নির্যাতন করে তার এতিম নাতির বিয়ের জন্য লালন পালন করা একমাত্র বকনা গুরুটি বিক্রি করেদেন ওই নেতারা, হাতিয়ে নেন গরুবিক্রির সমোদয় টাকা। একটি হতদরিদ্র পরিবারের উপর এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামে।

ভূক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির (৬৫) ওই গ্রামের মৃত আলী আকবর ফকিরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ঝাড়ু বিক্রেতা।

অভিযুক্তরা হলেন কাওরাইদ ইউনিয়নের চার নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই শ্রমিকদল নেতা কামরুল ইসলাম, তাদের সহযোগী একই গ্রামের ইব্রাহীম, রাণা, রমজান-১, রমজান-২, ওসমানসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী জামিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, গত রবিবার ২৭ অক্টোবর ভোর ৬টার দিকে ইব্রাহীম তাকে ফোন করে জানায় তার এক আত্মীয় আল আমীন একটি মেয়েসহ আটক আছে। খবর পেয়ে জাহাম্মদ স্থানীয় তারকাটা বাজারে যান। সেখানে ইব্রাহীম ও তার সহযোগীরা আল আমীনকে ছেড়ে দিতে টাকা দাবী করে। ওই সময় আল আমীন টাকা দিতে অপারগ হয়। পরে আল আমীন ও তার প্রেমিকা স্মৃতিকে দশ হাজার টাকার চুক্তিতে জাহাম্মদ আলীর জিম্মায় দেয়। বিকেলের মধ্যে আল আমীন ওই টাকা দিতে পারেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে অভিযুক্তরা জাহাম্মদ আলী ও আল আমীন জুটিকে তারকাটা বাজারে ডেকে নেয়। জাহাম্মদ আলীর বাড়িতে ওই প্রেমিক জুটি রাখার অপবাদ দিয়ে বৃদ্ধ জাহাম্মদকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে অভিযুক্তরা।

এ সময় জাহাম্মদ আলীর নিকট পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে অভিযুক্তরা। পরে তা কমিয়ে ত্রিশ হাজার দাবী করা হয়। হতদরিদ্র জাহাম্মদ টাকা দিতে পারেনি। ওই টাকা আদায় করতে এতিম নাতি রাকিবুলের বিয়ের জন্য রাখা বকনা গরুটি স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে ডেকে তার নিকট বিক্রি করে অভিযুক্তরা। এ সময় ইব্রাহীম জাহাম্মদ আলীর স্ত্রীর হাতে ছয় হাজার টাকা দিয়ে গরু বিক্রির সমস্ত টাকা নিয়ে যায়।

একটি হতদরিদ্র পরিবারের গরু বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গরুর খাবারের গামলার (পাত্র) সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন জাহাম্মদ দম্পতি।

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে জাহাম্মদ বলেন, একমাত্র এতিম নাতি রাকিবুলকে একটি বকনা গরু কিনে দিয়েছিলাম। গরুটি লালন পালন করছিলাম বড় করে তার বিয়ে টাকা যোগাড় করবো, সে ভাগ্য হলোনা। অভিযুক্তরা বিএনপি দলের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে নির্যাতন করে, বাড়ি পুড়িয়ে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। মিথ্যা অভিযোগে পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্যের গরু বিক্রি করে সে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা বাবলু সরকারকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন।

কাওরাইদ ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. মমিনুল কাদের বলেন, আমার নিকট থেকে আটক যুবক যুবতীর অভিভাবকগণ স্বাক্ষর করে জিম্মায় নিয়ে যান। ওই জিম্মানামায় জাহাম্মদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। গরু বিক্রির বিষয়ে তিনি জানেন না।

কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল হক মন্ডল বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ এমন অপরাধ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।