বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান একদিনের কাজ নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের ফসল ৩৬ জুলাই গণ আন্দোলন।
আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাদের ইতিহাসে কখনো গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস নেই। ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশে শেখ মুজিব ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছিলেন। একদল বাকশাল কায়েম করেছিলেন। যার অবধারিত পরিণতি ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট। গত ১৫ বছর পতিত স্বৈরাচার হাসিনা দেশে যে অগণতান্ত্রীক পরিবেশ কায়েম করেছিলেন যার অবধারিত পরিণতি ৫ আগষ্ট। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল।
দেশ নিয়ে প্রতিদিন চক্রান্ত চলছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা সক্রিয়। তাই যেকোন ষড়যন্ত্র চক্রান্ত রুখে দিতে ছাত্র সমাজকে রাজপথে সক্রিয় থাকতে হবে। ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পতনের মাধ্যমে আন্দোলনের একটি উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনমানুষের দ্বিতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল করার মাধ্যমে দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৬৯ সালে শহীদ আসাদ, ৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোরনে শহীদ ডাক্তার মিলন এবং ২৪ সালে রংপুরের সাঈদ যেভাবে বুক পেকে বুলেটকে আলীঙ্গন করেছে তখনই স্বৈরাচার হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়েছে। দেশের ও রাষ্ট্রের সংস্কার বিএনপি চায়। সে কারণেই আমরা প্রথমে ২৭ দফা ও পরে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
গত ফ্যসিষ্ট সরকার মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। বিভিন্ন কালাকানুনের মাধ্যমে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার মিডিয়াকে দখল করে তার ফ্যাসিজম কায়েম করেছিল। বিএনপি সংস্কার চায়, তবে দ্রুত নির্বাচনও দরকার। দেশে যত দ্রুত নির্বাচন হবে ততোই দেশের মঙ্গল। মনে রাখতে হবে এটা কোন বিপ্লবী সরকার নয়, এটা সাংবিধানিক সংকার। বিপ্লবী সরকার হলে আমাদের কোন কথা থাকতো না। কিন্তু এটা হাইকোর্ট থেকে বৈধতা
নিয়ে এই সরকার গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে পলানোর ইতিহাস, ৭১ সালে শেখ মুজিব জাতিকে পাক বাহিনীর মুখে ফেলে রেখে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল। শেখ মুজিব দেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি চেযেছিলেন ক্ষমতা। শেখ মুজিব পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতারা সব পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে ফূর্তি করেছিল।
মেজর জিয়ার নেতৃর্ত্বে এদেশের ছাত্র-জনতা, কৃষক, শ্রমিক, নারী-পুরুষ একত্রে মিলে যুদ্ধ করে দেশ যেমন স্বাধীন করেছিল, তেমনি তারেক রহমানের নেতৃত্বে গত ১৫ বছর এদেশের সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা দীর্ঘ সংগ্রাম করে জুলাই বিপ্লবের মহা আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিষ্ট ও স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সেই পতিত হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত “ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও আজকের প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা” – শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম-আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টি এস আয়ুব, এ্যাড. কাজী মুনিরুল হুদা, এ্যাড. মোহাম্মদ ইসহক, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, কামরুল ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আব্দুল্লাহ, শহীদ জাবের ও শহীদ তৌহিদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।