কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় তাঁতিদলের নেতার মামলায় ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. শরীফ (৩০) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার তারাকান্দি বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ।
গ্রেফতার মো. শরীফ উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের অমরপুর এলাকার মৃত আব্দুস শাহিদের ছেলে।
জানা গেছে, গত ২০ জুলাই ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে উপজেলা তাঁতিদলের সভাপতি মোস্তফা (৫৪) বাদি হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৬৩ নং আসামি করা হয় সুখিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরীফকে। ওই মামলায় শরীফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শরীফকে গ্রেফতারের পর থেকে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
দলের অন্য একটি সূত্র জানায়, পৌর বিএনপির সভাপতি এসএম মিনহাজ উদ্দিনের শ্বশুরবাড়ি একই এলাকায়। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধের কারণেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে ওই মামলায় শরীফকে দলীয় কর্মী হওয়ার পরেও ফাঁসানো হয়েছে।
শরীফের স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, দল করেও দলের সুদিনে আমার স্বামী মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার হয়েছে। প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। শুনেছি পাকুন্দিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি মিনহাজ উদ্দিনের ইশারায় এই মামলার আসামি হয়েছে আমার স্বামীকে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের বাড়ি ঘরে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করে দরজা, জানালা ভাঙচুর করেছে ও দুইটি স্মার্ট ফোন চুরি করে নিয়ে গেছে। এছাড়াও আমাদের জমি জমা দখল করে নিতে চেয়েছিল।
এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরো জানান, দুই বছরের শিশু বাচ্চা নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও বেঁচে নেই। আমার ঘরে কোনো পুরুষ নেই। আমি এখন অভিভাবকহীন। আমার এই খালি বাসায় আমাকে কে নিরাপত্তা দিবে এখন? আমার স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার আগেও স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে কোন ফল পাইনি। এক থেকে দশ নং আসামি আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে তারা গ্রেফতার হয় না। আমার স্বামী দল করেও গ্রেফতার হয়ে গেছে। এই কষ্ট আমি রাখবো কোথায়! কিছুদিন আগেও কিশোরগঞ্জের পুরান স্টেডিয়ামে তারেক রহমানের প্রোগ্রাম করে আসছে। আমার স্বামীর কাছ থেকে শুনেছি তারেক রহমান অনেক মানবিক মানুষ। আমি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এই ঘটনার সুবিচার চাই।
প্রতিবেশি হারুণ মিয়া জানান, শরীফ আগে থেকেই বিএনপি করে, এখনো সে বিএনপির রাজনীতি করে। বিএনপি’র লোক হয়েও বিএনপির নেতার মামলার আসামি হয়ে আজকে সে জেলখানায় বন্দি। তাইলে এই বিএনপি করে লাভ কি? আওয়ামী লীগের লোকের সাথে জমি নিয়ে ঝামেলার কারণে টাকা-পয়সা দিয়ে এই মামলায় জড়িয়ে শরীফকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা বিএনপি করি তাইলে আমাদেরতো কোনো নিরাপত্তা নাই।
সুখিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. ওয়াসিমুল বারী ওয়াসিম জানান, গ্রেফতার শরীফ আমাদের যুবদলের একটিভ কর্মী। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলন-সংগ্রামে বিভিন্ন সময় মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে ভূমিকা রেখেছে। ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরীফ। শরীফের মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। দুই বছরের দুধের শিশু নিয়ে শরীফের স্ত্রী এখন কার কাছে যাবে! যুবদলের কর্মী মামলার ৬৩ নম্বর আসামী হয়েও শরীফ আজকে কার ইশারায় গ্রেফতার? সুখিয়া ইউনিয়ন যুবদলের পক্ষ থেকে শরীফের নিঃস্বার্থ মুক্তি চাই।
মামলার বাদি পাকুন্দিয়া উপজেলা তাঁতিদলের আহ্বায়ক মোস্তফা জানান, ইউনিয়ন এবং পৌর বিএনপি’র নেতাদের লিস্টের মাধ্যমে মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলা করার সময় পৌর বিএনপির সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন। তাকে লিস্টে দেখিয়েই আমি মামলা করেছি। এখানে দলীয় কেউ আসামি হয়ে থাকলে সেই দায়ভার ইউনিয়নের নেতাদের।
সুখিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ কাজল জানান, শরীফ আমাদের যুবদলের কর্মী। যে মামলাটি হয়েছে সেই মামলাটি আমাদের সাথে কথা না বলে করায় আমাদের দলের লোকও মামলায় আসামি হয়েছে। আমি শরীফের নিঃস্বার্থ মুক্তি চাই।
পৌর বিএনপির সভাপতি এস এম মিনহাজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলা তো আমরাই করেছি, আওয়ামী লীগের লোকজনতো মামলা করে নাই। মামলা করার সময় আমি সাথে ছিলাম এবং আমাদের নেতৃবৃন্দও সাথে ছিল। তবে গ্রেফতার শরীফকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।
কিশোরগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সুমন জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এমন কিছু মামলা হচ্ছে যেখানে দলীয় নেতাকর্মীরাও বাদ যাচ্ছে না। শরীফের বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলবো। শরীফ যাতে দ্রুত মুক্তি পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করব।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াৎ হোসেন তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।