মুসলমানদের ইবাদতের পবিত্র স্থান মসজিদ। মসজিদে নামাজ আদায়ে মুসলিমদের অন্তরে আসে প্রশান্তি। প্রাচীন যুগকে ধরে রেখে বর্তমানেও মসজিদে চলছে কারুকার্যের অপূর্ব নির্দশন। তাই কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ঐতিহাসিক মোগল, তুর্কী ও পারস্য রীতির সংমিশ্রণে স্থাপিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘বিসমিল্লাহ সাত গম্বুজ মসজিদ’।
উপজেলার পুমদী ইউনিয়নের জগদল গ্রামে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদটি স্থানীয়ভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় হোসেনপুর-জগদল-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত স্বতন্ত্র নির্মাণ শৈলী ও নান্দনিকতার সৌন্দর্যমন্ডিত এ মসজিদে বর্তমানে নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে শুরু হওয়া মসজিদটির নির্মাণের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে। এ মসজিদে রয়েছে সাতটি গম্বুজ। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ ৭৪ ফুট। সাতটি গুম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি নির্মাণের সময় ইট-বালু, সিমেন্টেরর পাশাপাশি চিনামাটি, টাইলস ও মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে রঙ বেরঙের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক আলোক বাতি।
সূত্রে আরো জানা গেছে, নব-নির্মিত এ সাত গম্বুজ মসজিদে একসাথে কয়েক শ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। পাশাপাশি মহিলাদের জন্যও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের গায়ে লেখা রয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা, বিভিন্ন দোয়া ও কালেমা। মসজিদটির কারুকাজ করা হয়েছে মোগল, তুর্কী ও পারস্য রীতির সংমিশ্রণে। মসজিদটি নির্মাণ করতে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম ও তার ভাইয়েরাসহ অনেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ঘুরতে এলে পর্যটকরা দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখার জন্য আসেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এটি নির্মাণে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী গম্বুজ ব্যবহার করা হয়েছে। নির্মাণ শৈলীতেও রয়েছে মুনশিয়ানার ছাপ। নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে এ মসজিদটি বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি মসজিদের মধ্যে অন্যতম এটি। মসজিদের চারপাশে বড় আকারের একাধিক জানালা থাকায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এতে ভেতরে সারাক্ষণ শীতলভাব বজায় থাকে। এজন্য প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন। শুক্রবার বিকেল থেকে মসজিদ প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার পর মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এ সময় সদর উপজেলা থেকে মসজিদটি দেখতে আসা মো: সোহেল মিয়া, সাগর মিয়াসহ অনেকেই জানায়, ‘এমন সুন্দর মসজিদ আমি কখনো দেখিনি। এখানে নামাজ পড়ে মনে অনেক প্রশান্তি পেয়েছি। এখান থেকে ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না।’
শফিকুল ইসলাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি দেখে ফেরার সময় হঠাৎ মসজিদটি দেখে চোখ আটকে যায়। পরে ভেতরে গিয়ে মসজিদ পুরোটা দেখে এসে মনে অনেক শান্তি পেলাম।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো: শামীম মিয়া জানান, ‘আমাদের এলাকার আব্দস সালাম সাহেব এতো চমৎকার একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন এমনটা ভাবিনি। এমন চমৎকার নির্মাণ শৈলীর মসজিদ পেয়ে আমরা গর্বিত।’
হোসেনপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হয়েছে মসজিদটি। সহায়তা নেয়া হয়েছে দেশী-বিদেশী প্রযুক্তিবিদদের। তাই এখানে প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি দেখতে ও নামাজ পড়তে শতশত ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভীড় করছেন।’