রংপুরের মিঠাপুকুরে একটি বাড়িতে ছিনতাই করতে গিয়ে নারীকে ছুরিকাহত করে ছিনতাইকারী পালিয়ে যাওয়ার পর ছিনতাইকারী সন্দেহে মধ্যরাতে পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে আয়নাল (৩০) নামে এক যুবককে সন্দেহ মূল্যক তুলে নিয়ে এসে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে ছিনতাইকারী সন্দেহে আয়নালকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসার পর গণপিটুনি দিলে সকালে তার মৃত্যু হয়।
এর পূর্বে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় মনোয়ারা বেগম (৫৫) নামে ওই নারীকে ছিনতাইকারী এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। মনোয়ারা বেগম আশংকাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মিঠাপুকুর উপজেলা ১৪ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের বড় মির্জাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় মৃত-আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে ছিনতাইকারী প্রবেশ করে। মনোয়ারা বেগমকে বাড়িতে একা পেয়ে অজ্ঞাত এক ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।
এ সময় মনোয়ারা বেগম ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে চিৎকার দিয়ে বাড়ির বাহিরে এসে লুটিয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা তার চিৎকার শুনে তাকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় প্রথমে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এদিকে রাত আনুমানিক দেড় ঘটিকার সময় বড় মির্জাপুর গ্রামের কয়েকজন যুবক, মনোয়ারা বেগমকে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করেছে এমন খবরে পাশ্ববর্তী ধলারপাড়া গ্রাম থেকে মৃত-নুরুল ইসলামের পুত্র আইনুল মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে মোটরসাইকেলে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসেন। পরে রাতভর তাকে পেটানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী হাজরা খাতুন জানান, আয়নাল অবিবাহিত। তার বৃদ্ধ মা আর ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করেন। ছিঁচকে চোর স্বভাবের।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, যুবকদের মধ্যে আশিকুর এবং রেজা নামে দুইজনকে তারা চিনেছেন। বাকীরা কারা ছিলো তাদের জানা নেই।
আয়নালের বোন শিরিনা বেগম জানান, আয়নালের বউ, ছাওয়াল কেউ নাই। তাই হামার মাওক প্রতি মাসে আট হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা বলে সবাই মীমাংসা করে দিলো।
আয়নালের বৃদ্ধা মা বলেন, মোর বেটাক তুলে আনি ডাংগে মারি ফেলাইছে। এ্যালা মোক নাকি প্রতি মাসে আট হাজার করি ট্যাকা দেবে।
এ বিষয়ে জানতে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ওসি (তদন্ত) মোস্তফা কামাল জানান, ছিনতাইকারী সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।মনোয়ারা বেগমের স্বজনরা কেউ না থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।