বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ এক-তৃতীয়াংশ শূন্য পদ নিয়ে ধুকে ধুকে চলছে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম।
মৌলভীবাজারের উপজেলার রাজনগর ৩১ শয্যা হাসপাতালে ডাক্তার, মেডিকেল অফিসার, নার্স, আয়া, মিডওইফ, কুক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, মালিসহ ২২টি পদে শুন্য লোকবল সংকট নিয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। হাসপাতাল ভবন আছে, কিন্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় ঔষধ ও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা হচ্ছে ব্যহত। চিকিৎসক সংকট থাকার কারণে অনেককে বেসরকারি ক্লিনিকে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আর আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের ছুটতে হয় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে বা সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এই চিত্র মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক এবং নার্সসহ যে জনবল থাকার কথা তার অর্ধেকও নেই। চিকিৎসক সঙ্কট থাকার কারণে চিকিৎসা নিতে আসা ৮টি ইউনিয়নের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে।
জানা যায়, এই স্বল্প জনবল নিয়েই ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ শতাধিক রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। অন্তঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জনের অধিক রোগী ভর্তি থাকেন। বর্তমানে রোগীদের সেবা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোরে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারদেরও সেবায় হাত লাগাতে হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদ ২টি, কিন্তু ২টি পদই শুন্য। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় হাসপাতালের আশেপাশে প্রচুর আর্বজনা, লতা পাতা, আগাছা জমে আছে। যে কারণে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়ে বিপাকে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের সবাই জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত।
হাসপাতাল ঘুরে কোনো ডাক্তারের দেখা না পেয়ে দ্বারস্থ হতে হয় হাসপাতালের পরিসংখ্যান শাখায়। তিনি ব্যস্ত তথ্য প্রদান কাজে, কথা বলার সময় নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে পরিসংখ্যানবিদ নিজের নাম প্রকাশ না করে জানান, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সভায় আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছুটিতে আছেন। হাসপাতালের ৮ জনের বিপরীতে ৫ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন।
তিন তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের ঢালাই ছুয়ে পানি পড়ে নীচের রুমগুলোতে। ফলে অফিসের কাজ করতে যেমন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি মূল্যবান ডকুমেন্ট নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালে একটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এটি প্রায় সময় নষ্ট থাকে। জরুরী ভিক্তিতে রোগী জেলা সদরে বা সিলেট স্থনান্তর করতে হলে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করতে হয়।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজন জানান, কাটা-ছেড়া কিংবা দুর্ঘটনার রোগী হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার আগেই রেফার্ড করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে। জটিল কিংবা মারাত্মক দুর্ঘটনার রোগী হলে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। আর ডাক্তার দেখাতে এলে ঔষধ হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হয় প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন এইগুলো। বাকি সব ঔষধ কিনতে হয় বাহির থেকে। আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হলে সব বাহিরে করাতে হয়। সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের প্রশ্ন সরকারি বরাদ্ধকৃত ঔষধগুলো যায় কোথায়?
একাদিক রোগী জানান, হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকার কারণে বর্তমানে এক্স-রে করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের বিপরীতে জেনারেটর থাকলেও নেই তেল বরাদ্দ। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকে রোগীরা।
হাসপাতালে আসা রোগীদের সাথে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, সময়মতো ডাক্তার, নার্স পাওয়া যায় না, ঔষধ নাই বললেই চলে। আর পরীক্ষা নিরীক্ষা হাসপাতালের ভেতর হয় না, যা করতে হয় সবকিছু বাহিরে করতে হয়। হাসপাতালে এলে ভোগান্তির সীমা থাকে না। হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান, নার্স, ডাক্তার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকটের কারণে রোগীর সেবা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় খুব সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টী উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সামগ্রিক ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পিয়তী কর জানান, রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট রয়েছে। ৩১ শয্যার হাসপাতালটিতে ডাক্তারের পোস্ট ৮টা, এর মধ্যে ৩টি পদ শুন্য রয়েছে। ১ জন ডাক্তার অনুপস্থিত রয়েছেন বিনা অনুমতিতে। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ ২২টি, এই মুহূর্তে আছের ১ জন। স্টাফ নার্সের ২৬টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। মিডওইফ পদ ৪টি, কর্মরত আছেন ২ জন। কুকের ২টি পদের ১টি শুন্য। আয়ার ২ টি পদে ১ জন, আর মালির শুন্য পদে কোনো লোক নেই। এতগুলো শুন্য পদ নিয়ে মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে আমরা চেষ্টা করছি। এটা প্রাথমিক চিকৎসা কেন্দ্র। সাধ্যের মধ্যে যতোটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব তা আমাদের ডাক্তার, নার্সরা রোগীদের দিচ্ছেন। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।