ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বোয়ালখালী উপজেলার বালিকা দলকে (ইউএনও) হিমাদ্রি খীসার অভিনন্দন মুরাদনগরে সম্পত্তি বিরোধে আপন ভাতিজিকে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে নুরের বার্তা পাংশায় ৫৩ তম জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহে জামায়াতের উদ্যোগে ‘বিপ্লবের শহীদ’ স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন কালুরঘাট সেতুতে টোল আদায় শুরু পিনাকীর ১ মিনিটের ভিডিও বার্তা এবার ধানমন্ডি ৩২-এ আগুন আওয়ামী বিরোধী স্লোগানে উত্তাল ধানমন্ডি ৩২ ধনমন্ডি ৩২ নম্বরে মিছিল ও ভাঙচুর চালাচ্ছে ছাত্র-জনতা মাঠে থাকার ঘোষণা উপদেষ্টা নাহিদের ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে পিনাকীর স্ট্যাটাস

পবাফুফেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ২৫ বছরের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ছবি: সংগৃহীত

২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম বরাদ্দের ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট মানুষসহ অনেকেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক প্রথমে ১০ বছর পরবর্তীতে ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিকট ইজারা/লীজ দেয়া হয়েছে। এমন অনভিপ্রেত সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের সকল ক্লাব ও ক্রীড়ামোদী জনগণ হতবাক ও মর্মাহত।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে জুলাই স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত ক্লাব প্রতিনিধি ব্যানারে একটি সংবেদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত ক্লাব সমূহের পক্ষে এ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী এসব কথা জানান।

তিনি জানান, ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাফুফে নিকট ইজারা/লীজ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে ক্রীড়ামোদী জনগণের পক্ষে ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার নিকট চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক একটি সংশোধনী পত্র প্রেরণ করেছে, যাতে চট্টগ্রামে সকল ক্রীড়া কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বাফুফের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। যা কোনোভাবেই চট্টগ্রামের ক্রীড়ামোদী জনগণের কাম্য নহে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণের নিজস্ব অর্থায়নে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের মাঠ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনেই থাকবে। অন্য কারো তত্ত্বাবধানে থাকা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার সকল পর্যায়ের ক্রীড়ানুরাগী, ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ, পেশাজীবি সংগঠকবৃন্দ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অবগত হয়েছে যে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় না করে শুধুমাত্র একটি খেলাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে আগামী ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে থাকা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি বরাদ্দ প্রদানের অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা বৃহত্তর চাট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম মাতৃকায় ক্রীড়াবিদদের চারণভূমি খ্যাত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটিতে ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য প্রায় ৩০টি খেলা অনেক বছর যাবত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়া প্রেমিকদের নিজস্ব অর্থায়নে পাকিস্তান আমলে এই মাঠটিতে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়।

এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি বহুমাত্রিক ক্রীড়া কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ মাঠ থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলার সুনীল কৃষ্ণ দে, দিলীপ বড়ুয়া, ইউসুফ বলি, জসিম উদ্দীন আহমদ, কিংবদন্তি আশীষ ভদ্র, এজহারুল হক টিপু, এফ, আই, কামাল, মমিনুল ইসলাম খসরু, পান্না লাল নন্দী, মামুনুল ইসলাম মামুন, মো. আসাদ, মো. কায়সার, মো. ফরহাদ, মো. আনোয়ার এর মত ফুটবলার যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ক্রিকেটে শফিকুল হক হীরা, নুরুল আবেদীন নোবেল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, শহিদুল ইসলাম, ফজলে বারী খান রুবেল, আজম ইকবাল, নাফিস ইকবাল, তামিম ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিমউদ্দীন, হকিতে আজিজুর রহমান সেলিম, মো. হারুন, মো. মহসিন, অ্যাথলেটিকসে আবদুল আওয়াল, মিলজার হোসেন, মিসেস আজিজা খানম, মিসেস শর্মিষ্ঠ্য রায়, সোহেল সরওয়ার, হ্যান্ডবলে এনামুল হাসান, অভিজিৎ বড়ুয়া, রনি দত্ত ভলিবলে ইসমাইল কুতুবী, মো. রফিকসহ অন্যান্য খেলার অনেক জাতীয় খেলোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে এবং ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ লীগে অংশগ্রহণ করে আসছে।

তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুইটি স্টেডিয়াম যথাক্রমে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ও জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়াম রয়েছে। জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন খেলার জন্য গঠিত উপ-কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, কাবাডি, রাগবি, খো খো, আর্চারীসহ প্রায় ৩০টি ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, এছাড়াও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত খেলা ব্যতিরেকে চট্টগ্রাম জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত সকল খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল লীগ টুর্নামেন্টসহ অন্যান্য খেলার সাথে সমন্বয় করে সফলতার সাথে আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও এ মাঠটিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লীগ টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে আরো জানান, জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে ক্রিকেট, টি-২০ ক্রিকেট এবং জাতীয় ক্রিকেটের দল সমূহের অনুশীলনও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে। ফুটবল খেলা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে মাঠটি বরাদ্দ প্রদান করা হলে ফুটবল ছাড়া অন্যান্য ৩০টি খেলার স্থানীয় লীগ/ টুর্নামেন্ট এবং এইসব ইভেন্টের অনুশীলন কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য আগত বিভিন্ন দলের অনুশীলনও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে চট্টগ্রামে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও অনুষ্ঠিত না হওয়ার শংকা থেকে যায়।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। ফুটবলের জন্য আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালানাধীন পলোগ্রাউন্ড মাঠ বা জংগল সলিমপুর বা কর্ণফুলী ট্যানেলের অপর প্রান্তে স্থাপিত হলে একদিকে চট্টগ্রাম মহানগর যানজট মুক্ত হবে এবং অপরদিকে কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্ত আধিকতরহারে ব্যবহার উপযোগী হবে।

স্টেডিয়ামটি সিজিকেএসের ৩০টির মতো ইভেন্ট পরিচালনা করে। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই আমরা দেখতে পেয়েছি একদিন সকালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, চট্টগ্রামের বৃহত্তর স্বার্থে এ মাঠটি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের জন্যই ব্যবহৃত হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলাধুলা বন্ধ হলে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন খেলা সমূহের খেলোয়াড়, কোচ, কোচিং স্টাফসহ প্রায় সাত হাজারের অধিক পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে যুবসমাজ মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সংযুক্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বরাবরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য বরাদ্দের আদেশ রহিত করে চট্টগ্রামের সকল প্রকার খেলাধুলা নিয়মিত আয়োজন করার সুযোগ প্রদান করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদূল কবির কচি, সিজেকেএস সাবেক কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান, সৈয়দ আবুল বশর, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর, নির্বাহী সদস্য এ কে এম আব্দুল হান্নান আকবর, আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, শাহজাদা আলম। এ সময় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিয়াজ মো. খানসহ সিজেকেএস ক্লাব সমূহের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
Verified by MonsterInsights

পবাফুফেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ২৫ বছরের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আপডেট সময় ০৫:৪২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়াম বরাদ্দের ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট মানুষসহ অনেকেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক প্রথমে ১০ বছর পরবর্তীতে ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিকট ইজারা/লীজ দেয়া হয়েছে। এমন অনভিপ্রেত সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের সকল ক্লাব ও ক্রীড়ামোদী জনগণ হতবাক ও মর্মাহত।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে জুলাই স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত ক্লাব প্রতিনিধি ব্যানারে একটি সংবেদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত ক্লাব সমূহের পক্ষে এ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী এসব কথা জানান।

তিনি জানান, ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাফুফে নিকট ইজারা/লীজ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে ক্রীড়ামোদী জনগণের পক্ষে ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার নিকট চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক একটি সংশোধনী পত্র প্রেরণ করেছে, যাতে চট্টগ্রামে সকল ক্রীড়া কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বাফুফের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। যা কোনোভাবেই চট্টগ্রামের ক্রীড়ামোদী জনগণের কাম্য নহে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণের নিজস্ব অর্থায়নে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের মাঠ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনেই থাকবে। অন্য কারো তত্ত্বাবধানে থাকা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার সকল পর্যায়ের ক্রীড়ানুরাগী, ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ, পেশাজীবি সংগঠকবৃন্দ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অবগত হয়েছে যে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় না করে শুধুমাত্র একটি খেলাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে আগামী ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে থাকা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি বরাদ্দ প্রদানের অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা বৃহত্তর চাট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম মাতৃকায় ক্রীড়াবিদদের চারণভূমি খ্যাত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটিতে ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য প্রায় ৩০টি খেলা অনেক বছর যাবত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়া প্রেমিকদের নিজস্ব অর্থায়নে পাকিস্তান আমলে এই মাঠটিতে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়।

এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি বহুমাত্রিক ক্রীড়া কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ মাঠ থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলার সুনীল কৃষ্ণ দে, দিলীপ বড়ুয়া, ইউসুফ বলি, জসিম উদ্দীন আহমদ, কিংবদন্তি আশীষ ভদ্র, এজহারুল হক টিপু, এফ, আই, কামাল, মমিনুল ইসলাম খসরু, পান্না লাল নন্দী, মামুনুল ইসলাম মামুন, মো. আসাদ, মো. কায়সার, মো. ফরহাদ, মো. আনোয়ার এর মত ফুটবলার যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ক্রিকেটে শফিকুল হক হীরা, নুরুল আবেদীন নোবেল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, শহিদুল ইসলাম, ফজলে বারী খান রুবেল, আজম ইকবাল, নাফিস ইকবাল, তামিম ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিমউদ্দীন, হকিতে আজিজুর রহমান সেলিম, মো. হারুন, মো. মহসিন, অ্যাথলেটিকসে আবদুল আওয়াল, মিলজার হোসেন, মিসেস আজিজা খানম, মিসেস শর্মিষ্ঠ্য রায়, সোহেল সরওয়ার, হ্যান্ডবলে এনামুল হাসান, অভিজিৎ বড়ুয়া, রনি দত্ত ভলিবলে ইসমাইল কুতুবী, মো. রফিকসহ অন্যান্য খেলার অনেক জাতীয় খেলোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে এবং ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ লীগে অংশগ্রহণ করে আসছে।

তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুইটি স্টেডিয়াম যথাক্রমে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ও জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়াম রয়েছে। জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন খেলার জন্য গঠিত উপ-কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, কাবাডি, রাগবি, খো খো, আর্চারীসহ প্রায় ৩০টি ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, এছাড়াও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত খেলা ব্যতিরেকে চট্টগ্রাম জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত সকল খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল লীগ টুর্নামেন্টসহ অন্যান্য খেলার সাথে সমন্বয় করে সফলতার সাথে আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও এ মাঠটিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লীগ টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে আরো জানান, জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে ক্রিকেট, টি-২০ ক্রিকেট এবং জাতীয় ক্রিকেটের দল সমূহের অনুশীলনও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে। ফুটবল খেলা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে মাঠটি বরাদ্দ প্রদান করা হলে ফুটবল ছাড়া অন্যান্য ৩০টি খেলার স্থানীয় লীগ/ টুর্নামেন্ট এবং এইসব ইভেন্টের অনুশীলন কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য আগত বিভিন্ন দলের অনুশীলনও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে চট্টগ্রামে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও অনুষ্ঠিত না হওয়ার শংকা থেকে যায়।

হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। ফুটবলের জন্য আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালানাধীন পলোগ্রাউন্ড মাঠ বা জংগল সলিমপুর বা কর্ণফুলী ট্যানেলের অপর প্রান্তে স্থাপিত হলে একদিকে চট্টগ্রাম মহানগর যানজট মুক্ত হবে এবং অপরদিকে কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্ত আধিকতরহারে ব্যবহার উপযোগী হবে।

স্টেডিয়ামটি সিজিকেএসের ৩০টির মতো ইভেন্ট পরিচালনা করে। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই আমরা দেখতে পেয়েছি একদিন সকালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, চট্টগ্রামের বৃহত্তর স্বার্থে এ মাঠটি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের জন্যই ব্যবহৃত হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলাধুলা বন্ধ হলে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন খেলা সমূহের খেলোয়াড়, কোচ, কোচিং স্টাফসহ প্রায় সাত হাজারের অধিক পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে যুবসমাজ মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সংযুক্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বরাবরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য বরাদ্দের আদেশ রহিত করে চট্টগ্রামের সকল প্রকার খেলাধুলা নিয়মিত আয়োজন করার সুযোগ প্রদান করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদূল কবির কচি, সিজেকেএস সাবেক কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান, সৈয়দ আবুল বশর, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর, নির্বাহী সদস্য এ কে এম আব্দুল হান্নান আকবর, আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, শাহজাদা আলম। এ সময় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিয়াজ মো. খানসহ সিজেকেএস ক্লাব সমূহের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।