খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পল্লীমঙ্গল গ্রামের শাকবাড়িয়া খালের পাড়ে বাঁশের খুঁটির উপর তাল ও খেজুর পাতার ছাউনির একটি ঘর। খেজুর পাতার বেড়ার সঙ্গে রয়েছে নড়বড়ে একটি দরজাও। পাঁচ হাত দৈর্ঘ্য ও চার হাত প্রস্থের ঘরের এক পাশে তেলচিটচিটে কাঁথা-বালিশ, আরেক পাশে মাটির চুলা। সেখানেই রান্না করেন ইছামতী। সারা গ্রামে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বললেও তাঁর ঘরের অন্ধকার দূর হয় কুপির আলোয়।
বিধবা ও নিঃসন্তান ইছামতীর সঙ্গে থাকেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ভাই মোজাফফর। নিজের কষ্ট হলেও ভাইটিকে আগলে রেখেছেন। সঠিক বয়স বলতে না পারলেও ৬৫ বছরের বেশি হবে বলে ধারণা তাঁর। তিন মাস পরপর বয়স্ক ভাতার টাকা পান তিনি। সে টাকা খরচ হয়ে যায় ভাই বোনের ওষুধ কিনতে। ভিজিডি’র ৩০ কেজি চালে মাস পার হয়।
শাকবাড়িয়া খালের পাড়ে প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে এভাবে কষ্টে জীবন কাটছে ইছামতীর। স্বামী মাজেদ সরদার মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। সন্তান না থাকায় স্বামীর ভিটায় জায়গা হয়নি। আশ্রয় হয়েছে পৈতৃক ২ শতাংশ জমিতে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর অভাব-অনটনের মধ্যেই প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে পড়ে আছেন সেখানে। আরেক ভাই নিরুদ্দেশ।
ইছামতী বলছিলেন, ‘সকালে খাবার পর রান্দার (রান্না) কাঠ আর তরকারি জুগাড় করতি বের হই। দুপুরি একবারই রান্দি। তাতেই রাত্তির আর সকালে খাই-দাই। এক হাতেই সব করতি হয়। যখন অসুখি পড়ি, তখন এট্টু কষ্ট হয়। এভাবেই ভালো আছি।’
ভাতার টাকা আর ভিজিডি’র চালে মাস পার করতে কষ্ট হয় কিনা- জানতে চাইলে মলিন মুখে চেয়ে থাকেন ইছামতী। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘আমাগের কষ্টের কথা কেডা শুনবে। যখন খুব ঠেকায় (অভাবে) পড়ি, পাড়ার মানষির বাড়ি যাই। তারা কিছু সাহিয্যি (সহযোগিতা) করে। ঠেকায় না পড়লি কারও কাছে হাত পাতিনে বাপু।’
বছরে শুধু কোরবানির ঈদের সময় মাংস খেতে পারেন ভাই-বোন। এমন তথ্য জানিয়ে ইছামতী বললেন, ‘আমাগে প্যাটের খিদে মিটলেই হলো। মাছ-মাংস খাবার ইচ্ছে জাগে না। তবে মাছ মাঝে মধ্যি চাইয়ে আনি।’
প্রতিবেশী রহিমা খাতুন বলেন, ‘ইছামতীর কপালে সেরকম একটা ঘর জুটলি শেষ জীবনে অন্তত ভালোভাবে জীবন কাটাতি পারতো।’