ঢাকা ১২:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে জুলকারনাইনের পরামর্শ ‘ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ’ বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ দুই মাস ছাত্র-জনতা রাজপথে থাকবে: নাহিদ ইসলাম সারজিস আলম আহত ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার হামলা, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুর শেষ বলে ম্যাচ জিতে ফাইনালে চিটাগং জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বোয়ালখালী উপজেলার বালিকা দলকে (ইউএনও) হিমাদ্রি খীসার অভিনন্দন মুরাদনগরে সম্পত্তি বিরোধে আপন ভাতিজিকে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে নুরের বার্তা পাংশায় ৫৩ তম জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহে জামায়াতের উদ্যোগে ‘বিপ্লবের শহীদ’ স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন কালুরঘাট সেতুতে টোল আদায় শুরু

“বাংলাদেশে ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংস্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সেল ও কমিশন গঠনের সুপারিশ”

  • জগলুল কবির নাসির
  • আপডেট সময় ০৩:০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১০৩১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে পরিকল্পিত উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ভৌত পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে একটি ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক সেল ও কমিশন গঠন করা জরুরী। প্রকৌশলী নূরুল্লাহ্,পরিকল্পনাবিদ, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ( নগর ব্যবস্থাপনা), এলজিইডি । ৩০ নভেম্বর শনিবার ধানমন্ডি ৭ নাম্বার রোডে বিলিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশের ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সংস্কারের রুপরেখা নিয়ে নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস)সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ ঢাকা এক সেমিনারের আয়োজন করে।

 

উক্ত সেমিনারে বাংলাদেশের ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সংস্কারের রূপ রেখা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী নুরুল্লাহ। তিনি বলেন , দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ায় মানুষের মনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের বিষয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। নূতন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অবহেলিত ভৌত পরিকল্পনা কার্যক্রমের বিষয়ে কিছু তথ্য আমাকে আজকে এই সেমিনারে উপস্থাপন করছি । একটি উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের জন্য মৌলিক তিনটি ধারায় সমান্তরাল ভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যথাক্রমে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের মাধ্যমে আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং জাতীয় উন্নয়ন কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এর কার্যক্রম সম্পন্ন করা। বাংলাদেশে এই মৌলিক তিনটি ধারার মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ধারা অর্থাৎ জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যক্রমটি যথাযথ পরিকল্পনা অনুসারে বাস্তবায়ন করা হয় না। এটি বাস্তবায়নের জন্য নেই কোন আইনী কাঠামো ও সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান। গুরুত্বপূর্ণ সমন্বিত উন্নয়নের দ্বিতীয় ধারাটি বাস্তবায়ন করানোর দায়িত্ব দেশের পরিকল্পনাবিদদের।এই দ্বিতীয় ধারায় বর্ণিত জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনতার ৫২ বৎসর পরেও কোন পরিকল্পনা আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। একটু উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে আর্থ – সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত আইন ও বিভিন্ন সেক্টরের পলিসি আমলে নিয়ে জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়। জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা অনুসরণে অঞ্চল ভিত্তিক কাঠামো পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। অঞ্চলের কাঠামো পরিকল্পনা অনুসরনে অঞ্চলের আওতাভুক্ত সিটি কাউন্সিল, মিউনিসিপ্যালিটি ও জেলা কাউন্সিল তাদের অঞ্চলের জন্য স্থানীয় পরিকল্পনা তৈরি করে। স্থানীয় পরিকল্পনায় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে পূর্ণাঙ্গ ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এটি একটি প্রচলিত নিয়ম। ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য এই সকল দেশ আইনি কাঠামো হিসাবে ”নগর ও গ্রাম পরিকল্পনা আইন”,”জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা’ ও “নগরায়ন নীতিমালা”প্রণয়ন করে তা পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে গঠিত একটি নির্দিষ্ট ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন থাকে। এই সকল দেশে সরকার প্রধানকে সভাপতি করে ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিল স্থাপন, যার সদস্য -সচিব হিসাবে থাকেন ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তর ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকার প্রধানের জন্য সকল ধরনের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৮৬)ভৌত পরিকল্পনার বিষয়ে উপরে বর্ণিত সকল কৌশলের কথা বলা ছিল এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপর ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক যাবতীয় কাজ শুরু করার দায়িত্ব থাকলেও তা স্বাধীনতার ওর ৫২ বৎসর অদ্যাবদি শুরু করা হয়নি। দেশের যাবতীয় অপরিকল্পিত উন্নয়নের মূল কারণ হলো ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম না হওয়া। তিনি সেমিনারে ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে একটি রূপরেখা সম্বলিত গবেষণা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি পরিকল্পিত পরিবেশে বড় হয়ে নিজেদের বিকশিত করবে তার নিশ্চয়তা জন্য প্রয়োজন হল ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। প্রকৌশলী নূরুল্লাহ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করি এবং এর পূর্বে দেশের স্বনামধন্য প্রকৌশল সংস্থা এলজিইডি তে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ( নগর ব্যবস্থাপনা) হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। দেশের অপরিকল্পিত উন্নয়নের মৌলিক কারণসমূহ বুঝতে যে এক সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে খন্ডকালীন ছাত্র হিসাবে মাস্টার্স অফ আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং ডিগ্রি অর্জন করি। দেশের বিদেশের বিভিন্ন সমন্বিত ভৌত উন্নয়ন বিষয়ক রিপোর্ট ও বই পড়াসহ বিভিন্ন দেশের কলারদের সাথে আলোচনা করে আমি বাংলাদেশে ভৌত পরিকল্পনার রূপরেখা বিষয়ক সংযুক্ত প্রতিবেদনটি লিখেছি। ভৌত পরিকল্পনার বিষয়টি বুঝে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োগের বিষয়টি আত্মস্থ করতে আমার সময় লেগেছে প্রায় ৭ বৎসর। অন্যান্য উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের সাথে আমাদের দেশের ভৌত উন্নয়নের মৌলিক পার্থক্যের খুঁটিনাটি বিষয় ভাবে বর্ণনা করার জন্য আমার বর্তমান প্রস্তুতি আশাব্যঞ্জক।দেশকে অপরিকল্পিত ভৌত উন্নয়নের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার বিষয় এখনই সময়। আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করি। এমতাবস্থায়, প্রধান উপদেষ্টার অফিসে ভৌত পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে একটি ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক সেল ও ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেন। এই কমিশনের মাধ্যমে দেশের চলমান ভৌত অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন পূর্ব নিয়ম অনুসারে আইন, নীতিমালা, ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিল ও ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্থাপন করা হবে। এসে ভৌত পরিকল্পনার কার্যক্রম শুরু করা যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ করার জন্য দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারকদের অনুরোধ করেন।

উক্ত সেমিনারে সভাপতি হিসাবে বক্তব্য প্রদান কালে সিইউএস এর ইমেরিটাস সাম্মনিনক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন,ছাত্র -জনতার অভ্যুত্থান উত্তর আলোচিত বিষয় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার। সংস্কারের তালিকায় নগরায়ন ও নগর উন্নয়ন প্রসঙ্গ এখনো বিবেচিত হচ্ছে না। নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার বিভাগ, পুলিশ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন ইত্যাদি বিষয় মতো জরুরী না হলেও নগর উন্নয়নের দিকেও দৃষ্টি দিয়া সমীচীন মনে করি। বর্তমান সংস্কার আলোচনার মুখ্য বিষয় বৈষম্য দূর করা ও মানবিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। নগরায়ন ও নগর উন্নয়ন পর্যালোচনাতেও এই দুই মুখ্য বিষয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত। উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সাম্মানিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দা ইসরাত নাজিয়া, পিএইচডি। বিশিষ্ট আলোচক হিসাবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ গোলাম মর্তুজা, সাম্মানিক সহ-সভাপতি নগর গবেষনা কেন্দ্র,স্থপতি পরিকল্পনাবিদ সালমা এ শফি, সাম্মানিক কোষাধ্যক্ষ, নগর গবেষণা কেন্দ্র, অধ্যাপক ডক্টর ইসরাত ইসলাম (বুয়েট),পরিকল্পনাবিদ শেখ মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউ অব প্ল্যানার্স(বিআইপি),অধ্যাপক ডক্টর মোঃ মাকসুদুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ডক্টর শফিক – উর- রহমান,নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিজ্ঞজন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
Verified by MonsterInsights

“বাংলাদেশে ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংস্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সেল ও কমিশন গঠনের সুপারিশ”

আপডেট সময় ০৩:০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে পরিকল্পিত উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ভৌত পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে একটি ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক সেল ও কমিশন গঠন করা জরুরী। প্রকৌশলী নূরুল্লাহ্,পরিকল্পনাবিদ, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ( নগর ব্যবস্থাপনা), এলজিইডি । ৩০ নভেম্বর শনিবার ধানমন্ডি ৭ নাম্বার রোডে বিলিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশের ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সংস্কারের রুপরেখা নিয়ে নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস)সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ ঢাকা এক সেমিনারের আয়োজন করে।

 

উক্ত সেমিনারে বাংলাদেশের ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সংস্কারের রূপ রেখা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী নুরুল্লাহ। তিনি বলেন , দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ায় মানুষের মনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের বিষয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। নূতন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অবহেলিত ভৌত পরিকল্পনা কার্যক্রমের বিষয়ে কিছু তথ্য আমাকে আজকে এই সেমিনারে উপস্থাপন করছি । একটি উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের জন্য মৌলিক তিনটি ধারায় সমান্তরাল ভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যথাক্রমে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের মাধ্যমে আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং জাতীয় উন্নয়ন কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এর কার্যক্রম সম্পন্ন করা। বাংলাদেশে এই মৌলিক তিনটি ধারার মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ধারা অর্থাৎ জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যক্রমটি যথাযথ পরিকল্পনা অনুসারে বাস্তবায়ন করা হয় না। এটি বাস্তবায়নের জন্য নেই কোন আইনী কাঠামো ও সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান। গুরুত্বপূর্ণ সমন্বিত উন্নয়নের দ্বিতীয় ধারাটি বাস্তবায়ন করানোর দায়িত্ব দেশের পরিকল্পনাবিদদের।এই দ্বিতীয় ধারায় বর্ণিত জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনতার ৫২ বৎসর পরেও কোন পরিকল্পনা আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। একটু উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে আর্থ – সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত আইন ও বিভিন্ন সেক্টরের পলিসি আমলে নিয়ে জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়। জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা অনুসরণে অঞ্চল ভিত্তিক কাঠামো পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। অঞ্চলের কাঠামো পরিকল্পনা অনুসরনে অঞ্চলের আওতাভুক্ত সিটি কাউন্সিল, মিউনিসিপ্যালিটি ও জেলা কাউন্সিল তাদের অঞ্চলের জন্য স্থানীয় পরিকল্পনা তৈরি করে। স্থানীয় পরিকল্পনায় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে পূর্ণাঙ্গ ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এটি একটি প্রচলিত নিয়ম। ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য এই সকল দেশ আইনি কাঠামো হিসাবে ”নগর ও গ্রাম পরিকল্পনা আইন”,”জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা’ ও “নগরায়ন নীতিমালা”প্রণয়ন করে তা পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে গঠিত একটি নির্দিষ্ট ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন থাকে। এই সকল দেশে সরকার প্রধানকে সভাপতি করে ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিল স্থাপন, যার সদস্য -সচিব হিসাবে থাকেন ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তর ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকার প্রধানের জন্য সকল ধরনের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৮৬)ভৌত পরিকল্পনার বিষয়ে উপরে বর্ণিত সকল কৌশলের কথা বলা ছিল এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপর ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক যাবতীয় কাজ শুরু করার দায়িত্ব থাকলেও তা স্বাধীনতার ওর ৫২ বৎসর অদ্যাবদি শুরু করা হয়নি। দেশের যাবতীয় অপরিকল্পিত উন্নয়নের মূল কারণ হলো ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম না হওয়া। তিনি সেমিনারে ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে একটি রূপরেখা সম্বলিত গবেষণা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি পরিকল্পিত পরিবেশে বড় হয়ে নিজেদের বিকশিত করবে তার নিশ্চয়তা জন্য প্রয়োজন হল ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। প্রকৌশলী নূরুল্লাহ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করি এবং এর পূর্বে দেশের স্বনামধন্য প্রকৌশল সংস্থা এলজিইডি তে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ( নগর ব্যবস্থাপনা) হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। দেশের অপরিকল্পিত উন্নয়নের মৌলিক কারণসমূহ বুঝতে যে এক সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে খন্ডকালীন ছাত্র হিসাবে মাস্টার্স অফ আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং ডিগ্রি অর্জন করি। দেশের বিদেশের বিভিন্ন সমন্বিত ভৌত উন্নয়ন বিষয়ক রিপোর্ট ও বই পড়াসহ বিভিন্ন দেশের কলারদের সাথে আলোচনা করে আমি বাংলাদেশে ভৌত পরিকল্পনার রূপরেখা বিষয়ক সংযুক্ত প্রতিবেদনটি লিখেছি। ভৌত পরিকল্পনার বিষয়টি বুঝে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োগের বিষয়টি আত্মস্থ করতে আমার সময় লেগেছে প্রায় ৭ বৎসর। অন্যান্য উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের সাথে আমাদের দেশের ভৌত উন্নয়নের মৌলিক পার্থক্যের খুঁটিনাটি বিষয় ভাবে বর্ণনা করার জন্য আমার বর্তমান প্রস্তুতি আশাব্যঞ্জক।দেশকে অপরিকল্পিত ভৌত উন্নয়নের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার বিষয় এখনই সময়। আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করি। এমতাবস্থায়, প্রধান উপদেষ্টার অফিসে ভৌত পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে একটি ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক সেল ও ভৌত পরিকল্পনা বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেন। এই কমিশনের মাধ্যমে দেশের চলমান ভৌত অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন পূর্ব নিয়ম অনুসারে আইন, নীতিমালা, ভৌত পরিকল্পনা কাউন্সিল ও ভৌত পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্থাপন করা হবে। এসে ভৌত পরিকল্পনার কার্যক্রম শুরু করা যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ করার জন্য দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারকদের অনুরোধ করেন।

উক্ত সেমিনারে সভাপতি হিসাবে বক্তব্য প্রদান কালে সিইউএস এর ইমেরিটাস সাম্মনিনক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন,ছাত্র -জনতার অভ্যুত্থান উত্তর আলোচিত বিষয় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার। সংস্কারের তালিকায় নগরায়ন ও নগর উন্নয়ন প্রসঙ্গ এখনো বিবেচিত হচ্ছে না। নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার বিভাগ, পুলিশ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন ইত্যাদি বিষয় মতো জরুরী না হলেও নগর উন্নয়নের দিকেও দৃষ্টি দিয়া সমীচীন মনে করি। বর্তমান সংস্কার আলোচনার মুখ্য বিষয় বৈষম্য দূর করা ও মানবিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। নগরায়ন ও নগর উন্নয়ন পর্যালোচনাতেও এই দুই মুখ্য বিষয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত। উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সাম্মানিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দা ইসরাত নাজিয়া, পিএইচডি। বিশিষ্ট আলোচক হিসাবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ গোলাম মর্তুজা, সাম্মানিক সহ-সভাপতি নগর গবেষনা কেন্দ্র,স্থপতি পরিকল্পনাবিদ সালমা এ শফি, সাম্মানিক কোষাধ্যক্ষ, নগর গবেষণা কেন্দ্র, অধ্যাপক ডক্টর ইসরাত ইসলাম (বুয়েট),পরিকল্পনাবিদ শেখ মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউ অব প্ল্যানার্স(বিআইপি),অধ্যাপক ডক্টর মোঃ মাকসুদুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ডক্টর শফিক – উর- রহমান,নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিজ্ঞজন।