‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল/ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্র মুকুল। চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়/বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণ বায়।’ বাংলার ষড়ঋতুর পরিক্রমায় এখন শীতকাল দাঁড়িয়ে আছে বিদায় বেলায়। ফাল্গুনের দেখা পেতে আরো সপ্তাহ দুই অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার আগেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের হাজার হাজার গাছে ফুটে উঠেছে আমের মুকুল। ডালে ডালে হিমেল হাওয়ায় দুলছে। জানান দিচ্ছে ফাল্গুনের আগমন বার্তা। ফাগুনের আগুন রাঙা রূপে সাজবে প্রকৃতি। ফুলে-ফুলে সুবাসিত হবে চারদিক। মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এরই মধ্যে আমের মুকুলের সুঘ্রাণে মাতোয়ারা চারদিক। বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ। মধু সংগ্রহ করতে ভিড় করছে মৌমাছিরা, জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। হরেক রকমের আমের জন্য উত্তরাঞ্চল প্রসিদ্ধ হলেও এখন সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বাহারি আমের চাষ করা হচ্ছে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানের বাংলোর আশপাশে রয়েছে নানা জাতের আম গাছ। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন আগের বৃষ্টির পানি পেয়ে গাছে গাছে আমের মুকুল বের হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের ভালো ফলন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে বাগানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলো।
জেলার নার্সারি মালিকরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে তাদের নার্সারি ও বাগানে লাগানো আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর আমের বাগান মালিক আজাদ মিয়া। তিনি জানান, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে তাদের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। কিছু গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। বেশিরভাগ গাছে মুকুল বের হচ্ছে। মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের পরিচর্যা করেছেন। মুকুলের বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করছেন।’
কমলগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী আশরাফ সিদ্দিকী পারভেজ বলেন, ‘চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্ট করছে মৌ মৌ ঘ্রাণ। সোনালি হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ মানুষের মনকে করছে বিমোহিত। প্রতিটি গাছে মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসছে মনের আনন্দে। দৃশ্যটি যে কাউকেই কাছে টানবে। এককথায় বলা যায়, মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মনকে করে তুলছে আরো প্রাণবন্ত। পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় জানান, ‘আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে। তবু এ সময় বিভিন্ন পোকামাকড় মুকুলের ক্ষতি করে। এ পোকা দমনে বালইনাশক স্প্রে করলে তা আক্রমণ করতে পারে না।’ খুব ভালো ফলন পাওয়ার আশা করেন তিনি।’
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর আমের আগাম মুকুল ফুটেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে মুকুলগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমের মুকুলের পরিচর্যায় এভোমেট্রিন ও ছত্রাকনাশক মেনকোজেভ বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমচাষী এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময় মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে বলে ধারণ করা হচ্ছে।’