রাজশাহীতে আলুর দামে আবারও ব্যাপক ধস নেমেছে। গত তিন দিনে মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের মতে, গত ৩০ বছরে তারা এমন দরপতন দেখেননি। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, অনেক কৃষক আলু ফেলে দিচ্ছেন বা মাঠেই রেখে দিচ্ছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগার মালিক ও মজুতদারদের কারসাজিতে আলুর দরপতন ঘটেছে। এবার জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকেই আলু বিক্রি করে জমির ইজারা খরচও তুলতে পারছেন না।
তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমদিকে আলুর কেজি ছিল ১২ থেকে ১৩ টাকা, যা এখন ৮ থেকে ৯ টাকায় নেমে এসেছে। এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে তিনি ২৪-২৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন। অথচ ইজারা, শ্রমিক, সার, সেচসহ খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। এতে প্রতি বিঘায় তাকে ৩৮ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মোহনপুরের চাষী মাজহারুল ইসলামের অভিযোগ, হিমাগারে অগ্রিম বুকিং থাকা সত্ত্বেও আলু রাখতে পারছেন না। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিছু ব্যক্তি জোর করে আলু সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছেন, ফলে সাধারণ কৃষকরা আরও বিপদে পড়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ১১ লাখ টন আলু উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু রাজশাহীর ৩৬টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র ৪ লাখ টন, যার ফলে ৭ লাখ টন আলু সংরক্ষণের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
তানোরের আড়াদীঘি গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান জানান, তার ৪০ বিঘা জমিতে ৭ হাজার বস্তা আলু হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেক হিমাগারে নেওয়া হলেও বাকিটা রাখা যাচ্ছে না।
অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি সিন্ডিকেট বুকিং ছাড়াই আলু সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে এবং কৃষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
রহমান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার আব্দুল মুনিম স্বীকার করেছেন যে, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি আলু রাখতে চাচ্ছেন, তবে সেটার পরিমাণ খুব বেশি নয়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোতালেব হোসেন জানান, এ বছর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে, কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় সরবরাহ বেড়ে গিয়েছে, যা দাম কমার মূল কারণ।
জাহানাবাদ এলাকার চাষী জাহিদুল করিম বলেন, আমরা কৃষকরা সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। আলুর ফলন ভালো হলেও লাভ নেই, হিমাগারে জায়গা পাচ্ছি না, অথচ সংরক্ষণের খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত বছর প্রতি কেজি সংরক্ষণ খরচ ছিল ৪ টাকা, যা এবার বেড়ে ৮ টাকা হয়েছে।
কৃষকদের দাবি, সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরবর্তী মৌসুমে তারা আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।